সাজাদুল ইসলাম, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২২

উলিপুরে হানাদার মুক্ত দিবস

কুড়িগ্রামের উলিপুরে হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ৭১-এর গণকবর স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। পরে বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন রাংসার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ডি ফয়জার রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউস সামাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকার ইসাহাক আলী, উলিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সৈয়দা উম্মে হাবিবা পলী প্রমুখ।

এ ছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা, রাজনৈতিক নেতারা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ৪ ডিসেম্বর উলিপুর হানাদার মুক্ত দিবস অন্যান্য জেলা উপজেলার মতো উলিপুর উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের গৌরবান্বিত ইতিহাস রয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলার বেশির ভাগ অঞ্চল ১১নং সেক্টরের এবং দুর্গাপুর, বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কিছু অংশ ৬নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৯৭১ সালের আজকের দিনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে উলিপুুর ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি শত্রুবাহিনী।

এর আগে ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে দাগার কুঠি গ্রামে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তাদের দোসর স্থানীয় রাজাকার, আলবদর, আলসামস বাহিনী ও দালালদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় উপজেলা থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত হাতিয়া দাগার কুটি গ্রামে অপারেশনের নামে জঘন্যতম বর্বরতা চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করে ৬৯৭ জন নিরপরাধ মানুষকে। পরদিন এলাকাবাসী দাগার কুটি গ্রামেই ৬৯৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীর ক্ষত-বিক্ষত দেহ সংগ্রহ করে গণকবর দেয়। তাদের স্মরণে ওই স্থানে একটি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে। উলিপুর রেলস্টেশনের পাশে আরো একটি গণকবর রয়েছে। উলিপুর চিলমারী অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে ওই স্থানে মাটিচাপা দিয়ে কবর দেওয়া হতো।

১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর। ৬ ও ১১নং সেক্টর যৌথ আক্রমণ চালায় উলিপুরে অবস্থানরত হানাদার ক্যাম্পে। উলিপুরের ডাকবাংলায় পাকবাহিনী শক্ত অবস্থান গেড়েছিল। তিনটি দিক থেকে আক্রমণ চালানো হয় পাকবাহিনীর শক্ত অবস্থানের ওপর। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাতে স্থানীয় সাধারণ মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন, বিভৎস টর্চার, ধর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই ডাকবাংলা ক্যাম্প। আকস্মিক ত্রিমুখী আক্রমণে হকচকিয়ে ওঠে ক্যাম্পের পাকিস্তানি ও রাজাকার আল বদররা। কিছুক্ষণ পাল্টা আক্রমণ চালালে গুলিবিদ্ধ হন চাঁদ কোম্পানির চৌকস যোদ্ধা আবদুর রহিম মন্ডল, পরে তিনি এই গুলিবিদ্ধ হওয়ার অসুস্থতার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। এলাকায় তিনি শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close