কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
ঋণ ও সুদের বেড়াজালে কুয়াকাটার শুঁটকি ব্যবসা
কর্মসংস্থান আর রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কমে যাচ্ছে কুয়াকাটার শুঁটকি ব্যবসায়। স্থায়ী শুঁটকি পল্লীর অভাব, পুঁজি সংকট ও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না পাওয়াসহ নানা সমস্যায় বিপাকে শুঁকটি ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটার পর্যটনকে কেন্দ্র করে কলাপাড়াসহ চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত পল্লী ও শুঁটকি মার্কেট। কাঁচা মাছ কীটনাশক ছাড়াই পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে করা হচ্ছে শুঁকটি। মৌসুমের শেষ ভাগে পল্লীগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীরা। অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা এসব পল্লীতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৫০ মেট্রিক টন মাছের শুঁটকি হয়। যা দেশের বাজার ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাজারে বারোমাস চাহিদা থাকা পারও বর্ষায় শুকানো যায় না বলে প্রকৃতি নির্ভর এ ব্যবসা চলে কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। তাছাড়া শুঁটকির সাথে জড়িত অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের রয়েছে পুঁজি সংকট। এখানকার ব্যবসায়ীদের পুঁজি বলতে রয়েছে, এনজিওর লোন আর মহাজনদের উচ্চ সুদের ধার-দেনা। এনজির লোন ও মহাজনদের উচ্চ সুদ পরিশোধ করে ব্যবসা চালানো তাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এদিকে স্বাধীনতার পর থেকে এখনও কুয়াকাটায় গড়ে ওঠেনি কোনো স্থায়ী শুঁটকি পল্লী। শ্রমিকদের রয়েছে পারিশ্রমিক কম পাওয়ার অভিযোগ। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে শুঁটকি ব্যবসায়।
শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত শ্রমিক কদবানু প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সারাদিন খাটুনির পর তিনশ টাকা বেতন পাই। যা পাই তাতে কিছুই হয় না। বসে থাকলে তো পেটে খাবার জোটবেনা। তাই কাজ করি। যদি একটু বেতন বাড়াতো তবে ভালভাবে চলতে পারতাম। শুঁটকি ব্যবসায়ী রহমান মিয়া বলেন, বিভিন্ন দুর্যোগে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তারপরও বিশ বছর ধরে এ ব্যবসা ধরে রেখেছি। পুঁজি আমাদের বড় সমস্যা। স্থানীয় ব্যাংকগুলো আবাসন ব্যবসায়ীদের লোন দিলেও আমাদের দিচ্ছেনা। খুচরা বিক্রেতা করিম হাওলাদার বলেন, পর্যটন মৌসুমে শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা থাকে। এ মৌসুমে আমাদের ব্যবসা বেশ ভালই হয়। বর্ষা মৌসুমে আমাদের ব্যবসা তেমন একটা ভাল চলে না। তবে সরকার যদি স্থায়ীভাবে শুঁটকি পল্লী করে দিত তাহলে সারাবছর ব্যবসা করতে পারতাম।
কুয়াকাটার অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীতে ঘুরতে আসা পর্যটক সালেহীন আহমেদ বলেন, শুঁটকির গুণগত মান ভাল। বেশ পরিচ্ছন্নও। তবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় নজর বাড়ানো উচিৎ। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে এ উপজেলার ৩০০ জন জেলেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা জানান, শুঁটকি পল্লীর স্থান নির্ধারণের জন্য পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া শুঁটকি মার্কেটের জন্য এলজিইডিতে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থার জন্য জেলা প্রশাসনে ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে এনজিও মহাজনী ঋণের উৎপাত কমবে।
"