সরাইল ও তাড়াশ প্রতিনিধি

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সরাইল ও তাড়াশ

তাপপ্রবাহে শ্রমিক সংকট ধান কাটা নিয়ে শঙ্কা

তীব্র গরমে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে কোনো ধান কাটা শ্রমিকরা আসেননি * উচ্চমূল্যের বাজারে মজুরি নিয়ে ক্ষোভ শ্রমিকদের * শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় কৃষকদের ধান কাটার হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ

তীব্র তাপপ্রবাহে চলতি বোরো মৌসুমে ইরি-বোরো ধান কাটা নিয়ে শ্রমিক সংকটে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশের কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধান বেশ ভালো হয়েছে অথচ ধান কাটার ধুম নেই। বাধ্য হয়ে মাথায় রোদ আর তাপের মধ্যেই ধান খেতে নামছেন কৃষক। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায় তারা।

সরাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে ১৭ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। খেতে চলতি বছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে।

কৃষকরা জানান, ভালো ফলন হলেও তীব্র তাপদাহের কারণে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে কোনো ধান কাটা শ্রমিকরা আসেনি। এবার যে পরিমাণ তাপদাহ শুরু হয়েছে তাতে বেশির ভাগ শ্রমিক আসবে না ধারনা। ফলে সরাইলে ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান ভালো হয়েছে।

আরেক কৃষক আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। গরমে মাঠে ধান কাটতে নেমেছি। শরীরের ঘাম বের হয়ে আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।

এদিকে শ্রমিক জয়নাল মিয়া বলেন, ভোর ৫টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত ধান কাটার কাজ করে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা পান। উচ্চমূল্যের বাজারে এ উপার্জনে তাদের সংসার চলে না।

সরাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. একরাম হোসেন জানান, শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধান বেশ ভালো হয়েছে। আর যে সব এলাকায় ধান বেশি পেঁেকছে সেই সব এলাকায় হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে থেকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ প্রতিনিধি জানায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলী মাঠে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা ও কৃষকের বাড়ির উঠানে নতুন বোরো ধান মাড়াই শুরু হয়েছে। জমিতে ধান পেঁকে উঠায় দ্রুত কাটার জন্য ধানকাটার শুরুতেই উপজেলার কৃষকেরা শ্রমিক সংকটের মুখে পড়েছেন।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্রি ২৯, ব্রি ২৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯০, ব্রি কাটারীভোগ, সুবললতা, রড মিনিকেট, স্থানীয় জাত আব্দুল গুটি সহ বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। সার, ডিজেল, বিদ্যুতের কোন সমস্যা না হওয়ায় এ বছর নির্বিঘ্নে বোরো ধানের আবাদ করতে পেরেছেন।

তালম ইউনিয়নের পাড়িল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ সরকার জানান, বর্তমানে কৃষকের বাড়ি থেকে জমির দুরত্ব ভেদে মণ প্রতি ৬ থেকে ৮ কেজি ধান পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়ে ধানকাটা শুরু করেছে। এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা বিঘায় ধান কাটাচ্ছেন। কিন্তু উপজেলায় হারবেষ্টার মেশিন দিয়েও বিঘায় ২ হাজার টাকা খরচে ধান কাটা গেলেও বেশির ভাগ খড় নষ্ট হওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্যের কথা চিন্তা করে অনেকেই কৃষি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। তাই কৃষি শ্রমিকের চাহিদাও বেশি।

গোন্তা গ্রামের আরেক কৃষক আরমান সরকার বলেন, গরমের কারণে ধানকাটা শ্রমিকের সংকটও রয়েছে। জমিতে পাঁকা ধান পড়ে আছে শ্রমিকের অভাবে কাটতে পাচ্ছি না। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের আসতে দেড়ি হলেও তিন চার দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাওয়া যাবে। শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকদের কে দ্রুত পাঁকা ধান কাটার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close