ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

নিজেদের হাতেই থাকল সিটির ভাগ্য!

পুরো ম্যাচে আক্রমণে আধিপত্য করল ম্যানচেস্টার সিটি। দুই অর্ধে মিলল দুটি করে গোল। ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিয়নকে উড়িয়ে লিগ টেবিলে দুই নম্বরে উঠল পেপ গার্দিওলার দল। প্রতিপক্ষের মাঠে বৃহস্পতিবার রাতে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-০ গোলে জিতেছে শিরোপাধারীরা। চমৎকার গোলে কেভিন ডে ব্রুইনে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর দুটি গোল করেন ফিল ফোডেন। চতুর্থটি করেন হুলিয়ান আলভারেস। ৩৩ ম্যাচে ২৩ জয় ও ৭ ড্রয়ে সিটির পয়েন্ট এখন ৭৬। ৩৪ ম্যাচে ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আর্সেনাল। তাদের সমান ম্যাচে ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে নেমে গেছে লিভারপুল।

আর্সেনালের সবাই বৃহস্পতিবার রাতে নিশ্চয় প্রার্থনায় বসেছিল, ব্রাইটনের মাঠে যেন পর্যদুস্ত হয় ম্যানচেস্টার সিটি; ঠিক যেমনি আগের দিন মার্সিসাইড ডার্বিতে এভারটনের কাছে নাজেহাল হয়েছিল লিভারপুল। গানারদের সেই চাওয়ায় গুড়ে বালি। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরে, প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ভাগ্য নিজেদের হাতেই রেখেছে পেপ গার্দিওলার দল। গার্দিওলার এ দলটি আসলে এমনই দুর্বার; শিরোপার ঘ্রাণ পেলে যাদের দমে যাওয়ার ঘটনা বিরল। কেবল সর্বশেষ ম্যাচে সিটির আধিপত্যই আর্সেনালের নিরাশার কারণ নয়; মৌসুমের এ পর্যায়ে লিগের শিরোপা লড়াই যখন থাকে তুঙ্গে, চাপ হয়ে ওঠে ভীষণ মাত্রার, তখনই যেন গার্দিওলার দল হয়ে ওঠে আরো অপ্রতিরোধ্য। আগেও এর প্রমাণ মিলেছে, দেখা যাচ্ছে এবারও- যেন দুর্বলতার কোনো লেশ নেই দলটির।

লিগে গত মঙ্গলবার চেলসিকে ৫-০ গোলে গুঁড়িয়ে নিজেদের কাজটা সেরে রাখে আর্সেনাল। এ মূহূর্তে তারা আছেও পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। পরদিন এভারটনের মাঠে লিভারপুল ২-০ গোলে হেরে যাওয়ায় এখনো পয়েন্টের হিসেবে এককভাবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে মিকেল আর্তেতার দল। কিন্তু তারপরও স্বস্তিতে নেই তারা। মৌসুমের শুরু থেকেও অনেকটা সময় শীর্ষে ছিল আর্সেনাল, কিন্তু ডিসেম্বরে তাদের পথ হারানোর সুযোগে এবং নিজেরা হারানো ছন্দ ফিরে পেয়ে লড়াইয়ে উঠে আসে গত তিনবারের চ্যাম্পিয়ন সিটি। সেই থেকে দারুণ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় ব্রাইটনের মাঠে পুরোটা সময় আধিপত্য ধরে রেখে ৪-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে তারা। লিভারপুলকে তিনে নামিয়ে উঠে এসেছে দুইয়ে। গত মৌসুমেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শীর্ষস্থান ধরে রেখে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আর্সেনাল। কিন্তু মৌসুমের দ্বিতীয়ভাগে দুই দফায় পথ হারায় তারা, যে সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেনি সিটি। শেষভাগে ধারাবাহিকভাবে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে তারা ঘরে তোলে টানা তৃতীয় লিগ শিরোপা। এবারও তেমন কিছুর আঁচ মিলতে শুরু করেছে। অন্তত, গত ৬ ডিসেম্বরে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে হারের পর লিগে সিটি যেভাবে অজেয় হয়ে উঠেছে, তাতে তেমন কিছু বলাই যায়। সর্বশেষ ওই হারের পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৮ ম্যাচ অপরাজিত দলটি, এর মধ্যে ১৪টিতেই জয়। অবশ্য ডিসেম্বরের ছন্দপতনের পর থেকে আর্সেনালও ছন্দে আছে বেশ। এ বছরে লিগে তারা ১৪ ম্যাচ খেলে হেরেছে কেবল একটিতে, জিতেছে ১২টিতে, বাকি একটি ড্র। তাই এ দুই দল শেষ পর্যন্ত এমন সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে পারলে, শিরোপা লড়াই নিশ্চিতভাবেই গড়াবে শেষ দিনে।

তবে, এখন পর্যন্ত সিটি একটি ম্যাচ কম খেলায় নিয়ন্ত্রণ আছে তাদের হাতেই। বাকি পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে জিতলে টানা চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতবে তারা, সবশেষ সাত মৌসুমে জিতবে ষষ্ঠবার। গত কয়েক বছরের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, সেই সম্ভাবনা এবারও খুব ভালোমতোই আছে। কেননা, তাদের ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া সব তারকা নিজেদের ফিরে পেয়েছেন যেন একেবারে ঠিক সময়মতো। গত মৌসুমের রেকর্ড গোলদাতা আর্লিং হালান্ড এবার অবশ্য সেই খুনে রূপে নেই, বর্তমানে হালকা চোটে দলের বাইরেও আছেন নরওয়ের এই ফরোয়ার্ড। তবে, তার শূন্যতা মোটেও যে বুঝতে দিচ্ছেন না বাকিরা। দলটিতে শূন্যস্থান পূরণে সব সময় যেন নতুন কোনো জিনিয়াস প্রস্তুত থাকেন। এখন যেমন তারকা প্লেমেকার কেভিন ডে ব্রুইনে ও ফিল ফোডেন দারুণ জুটি গড়ে তুলেছেন, প্রতিপক্ষের রক্ষণ দুমড়ে-মুচড়ে দিতে যাদের জুড়ি মেলা ভার।

গোলও করছেন তারা। ব্রাইটনের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেই যার প্রমাণ মিলেছে দারুণভাবে। বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ডে ব্রুইনের বেলায় বলা হয়ে থাকে, মাঠের সবখানে সবকিছু করতেই পারদর্শী তিনি; কেবল হেড ছাড়া! ব্রাইটনের বিপক্ষে ঠিক সেটাই কী অসাধারণ ভঙ্গিমাতেই না করে দেখালেন তিনি; কাইল ওয়াকারের ক্রসে দুর্দান্ত ডাইভিং হেডে শুরুতে দলকে এগিয়ে দেন। লিগে এ নিয়ে ৬৮ গোল হলো ৩২ বছর বয়সি ডে ব্রুইনের, হেডে এ প্রথম। এরপর জোড়া গোল করেন ফোডেন।

লিগে সিটির জার্সি গায়ে ইংলিশ মিডফিল্ডারের গোল হলো ৫১টি, এর ১৬টি করেছেন তিনি চলতি মৌসুমে। মিডফিল্ডার হলেও গোলমুখে তার এমন কার্যকারিতা গুয়ার্দিওলার পরিকল্পনায় যোগ করেছে বিধ্বংসী এক অস্ত্র। আর শেষে দ্বিতীয়ার্ধে চতুর্থ গোলটি করে সিটির বড় জয় নিশ্চিত করেন হুলিয়ান আলভারেস। মৌসুমের এ মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে এটাও সিটির জন্য বিশাল এক পাওয়া। গত ৩১ জানুয়ারি বার্নলির বিপক্ষে ম্যাচে জোড়া গোলের পর এ প্রথম প্রিমিয়ার লিগে জালের দেখা পেলেন তিনি। কী মোক্ষম সময়েই না খরা কাটলো বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close