শাহেদ জাফর হোসেন

  ০৪ জুলাই, ২০২০

আইসক্রিম মামা

টিফিনের ঘণ্টা শুনলেই আনন্দপুর স্কুলের ছেলেমেয়েরা ছুটে চলে আসে মাঠে। কেউ খেলে, কেউ খেলা দেখে, কেউ আবার দল বেঁধে গল্প করে। খেলা, গল্প করার ফাঁকে ফাঁকে কারো আবার আইসক্রিম খাওয়ার নেশা চাপে। সাদা-নীল-লাল-বেগুনি রঙের সেসব আইসক্রিম।

এমন আইসক্রিম খাওয়ার দলে আছে সজীব, মিতু, রবিন, সন্ধ্যা আর ছোটন। ওরা দল বেঁধে গিয়ে দাঁড়ায় আইসক্রিমওয়ালার ম্যাজিক বাক্সের সামনে। আইসক্রিমওয়ালাকে ওরা সবাই মামা ডাকে। আইসক্রিম মামা। আইসক্রিম মামার বাক্সটা সব বন্ধু ম্যাজিক বাক্স মনে করে। করবেইবা না কেন? আইসক্রিম মামা ওই বাক্সের ভেতর হাত দিলেই বেরিয়ে আসে নানা রঙের আইসক্রিম। আর আইসক্রিম মামাটাও বেশ মজার। সব সময় মুখে হাসি লেগেই থাকে।

কেউ যদি কোনো দিন টাকা না নিয়ে আসে তবুও কোনো সমস্যা নেই। টাকা ছাড়াও আইসক্রিম মামার কাছে থেকে আইসক্রিম খেয়েছেÑ এমন ছেলেমেয়ে স্কুলে অনেক আছে। সবাইকে আইসক্রিম বাক্সের দিকে আসতে দেখলেই আইসক্রিম মামা মুখে মুখে ছড়া কাটে। সেই ছড়া শুনে সবাই মজা পায়। খিলখিল করে হাসে।

রংবেরঙের আইসক্রিম খাওয়া শেষে ওরা ক্লাসে ফিরে আসে। আবার কোনো দিন ছুটির সময় আইসক্রিম হাতে নিয়ে খেতে খেতে বাড়ির পথে পা বাড়ায় কেউ কেউ। এভাবেই চলতে চলতে এক দিন বন্ধুরা খেয়াল করে আইসক্রিম মামা স্কুল মাঠে আসেনি। তারাও তো মাঝেমধ্যে স্কুলে আসে না। আইসক্রিম মামার হয়তো জরুরি কাজ লেগে গেছে। তাই আসেনি। সবাই ভাবে কাল আসবে হয়তো।

কিন্তু সেদিনের পরদিনও আইসক্রিম মামার খোঁজ নেই। তার পরদিনও আনন্দপুর স্কুলের সবাই খেয়াল করে আইসক্রিম মামা আসেনি। চিন্তার ভাঁজ পড়ে সবার কপালে। তাহলে কি আর তাদের আইসক্রিম খাওয়া আর কোনো দিন হবে না।

এভাবে ১৫ দিন পার হয়ে যায়। আইসক্রিম মামা আর আসে না। সবার মন খারাপ। আইসক্রিম মামা কি সবার ওপর রাগ করেছে তাহলে? সজিব এক দিন স্কুলের দফতরি দাদুর কাছে শুনতে পাই আইসক্রিম মামার খুব অসুখ। ভীষণ অসুস্থ সে। এ কারণেই সে আসে না। সজিব দফতরি দাদুর কাছে আইসক্রিম মামার বাড়ির ঠিকানা জেনে নেয়। স্কুলের পাশের গ্রামেই তার বাড়ি।

সজিব এসে এই খারাপ খবরটা দেয় সবাইকে। সবার মন খারাপ হয় আইসক্রিম মামার জন্য। বন্ধুরা ঠিক করে ছুটির পর সবাই মিলে দেখতে যাবে আইসক্রিম মামাকে। গ্রামের মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে ওরা খুঁজে বের করে আইসক্রিম মামার বাড়ি। ছোট্ট খড়ের চালার ভাঙা একটা ঘর দেখিয়ে দেয় গ্রামের এক বয়স্ক মানুষ। ওরা সবাই গিয়ে দাঁড়ায় সেই ঘরটির সামনে। রবিন ডাক দেয় আস্তে করে আইসক্রিম মামা ও আইসক্রিম মামা। ঘরের ভেতর থেকে সেই পরিচিত হাসিমাখা মুখে রোগা শুকনো শরীর নিয়ে বেরিয়ে আসে আইসক্রিম মামা। সজিবদের দলের সবাই তাকে ঘিরে ধরে। নানা প্রশ্ন করে। একটার পর একটা উত্তর দেয় সবাইকেই।

আইসক্রিম মামা ওদের বলে শরীরটা প্রায় ঠিক হয়ে এসেছে। যা ধকল গেল এত দিন। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আগামী শনিবার থেকে সে আবার স্কুলের মাঠে আইসক্রিম নিয়ে যাবে। একথা শুনে সবাই এক সঙ্গে হইহুল্লোড় করে উঠে। আইসক্রিম মামা ওদের সবাইকে ধন্যবাদ দেয় তাকে দেখতে আসার জন্য। সজিবদের দলের সবাই আইসক্রিম মামার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খুশি মনে ফিরে আসে বাড়িতে।॥

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close