মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

পিনুর ফিরে আসা

পিনু, খুব দুরন্ত প্রকৃতির ছেলে। দুরন্ত হলেও পড়ালেখায় সে খুবই ভালো। পিনুর মা যখন ওর দুষ্টুমিতে খুবই বিরক্ত হয়ে যায়, তখন পাশের বাসার লোকরা পিনুর মাকে সান্ত¡না দেয়- ভালো ছাত্ররা একটু দুষ্টুমি বেশিই করে। শুধু পড়ালেখাতেই না, পিনু খেলাধুলায়ও ভীষণ ভালো।

এবারের প্রাথমিক শিক্ষাপদক প্রতিযোগিতায় অঙ্কদৌড়ে পিনু বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। অঙ্কের হিসাব যেন পিনুর কাছে একদম পান্তা ভাতের মতো।

পটাপট হিসাব করতে পারে, যোগ-বিয়োগের হিসাব মুখেই বলে দিতে পারে।

পিনু পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনতে ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু ইটপাথর আর বহুতল ভবন, রাস্তায় ট্রাক-বাসের হর্নে ব্যস্ত শহরে পাখপাখালির দেখা মেলাই এখন অসম্ভব প্রায়। পিনুর বাবা তাই পিনুকে মাঝেমধ্যেই তাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যায়। গ্রামের বাড়ি গেলেই শুধু তার ভীষণ পছন্দের পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনতে পায়। পিনুর আরো একটি পছন্দের খেলা হলো মাকড়সার জাল ভেঙে দিয়ে আবার পরিশ্রমী মাকড়সার জাল বোনা দেখা। তবে তার সবচেয়ে ভালো লাগে টিভিতে মোটো পাতলুর কার্টুন দেখতে। অবসর পেলেই সে ইউটিউবেও মোটো পাতলু কার্টুন দেখতে বসে যায়। তার ভীষণ পছন্দ মোটো কে। মোটোর সঙ্গে দেখা করতেও তার ভীষণ ইচ্ছে হয়।

পিনুর মার সবচেয়ে খারাপ লাগে পিনুর খাওয়ার সমস্যা নিয়ে। সে কিছুই খেতে চায় না। শাকসবজি, মাছ, দুধ, ডিম- এসবকিছুতে তার খুব অরুচি। বাইরের জাঙ্কফুড পেলে পিনু খুব খুশি। পিনু মোটো পাতলু কার্টুনের পাতলুর মতো দেখতে। খুবই চিকন। স্কুলের সহপাঠীরা তাকে পাতলু বলে খেপায়।

চৈত্র মাস, প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এদিকে আবার রমজানের প্রথম দশকও চলছে এই চৈত্র মাসে। মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও পিনু রোজা রাখবেই।

পিনুর মা ভীষণ চিন্তায়, আজ এখনো স্কুল থেকে পিনু এলো না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। ঘড়ির কাঁটা চারটা অতিক্রম করে চলেছে, তবুও পিনু বাসায় ফেরেনি। প্রতিদিন পিনু তিনটা পঁয়ত্রিশ মিনিটের দিকেই বাসায় ফিরে আসে। স্কুল থেকে বাসার দূরত্বও খুব বেশি না। হেঁটে গেলে মিনিট-পাঁচেকের মতো সময় লাগে। পিনুর মা স্কুলের ক্লাস টিচারকে ফোন দেয়। তিনটা ত্রিশে স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে শুনে পিনুর মায়ের চিন্তা আরো বাড়তে থাকে। পিনু এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার যাওয়ার জায়গা সীমিত। চতুর্থ শ্রেণি থেকেই তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অন্তু। অন্তুদের বাসায়ও ফোন করা হয়। সেখানেও পিনু যায়নি। বাসার লোকজন খুব চিন্তায় পড়ে গেল। বেরিয়ে পড়ল পিনুকে খুঁজতে।

পিনুর বাবাও হতবাক। কোথায় গেল পিনু? পিনুর মায়ের কান্না প্রায় বিলাপে পৌঁছেছে। ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে, সব আত্মীয়ের বাসায় ফোন করা হচ্ছে। ইফতারের সময় হয়ে এসেছে। সবাই দোয়া-দুরুদ পড়ছে। পিনুর মা ইফতারের আগে দুহাত তুলে চোখের পানি ফেলে দোয়া করছে, আল্লাহ যেন তার পিনুকে ফেরত দেয়।

সবারই খুব চরম উৎকণ্ঠায় প্রতিটি ক্ষণ কাটছে।

পিনুর বাবারও একটাই ভয়, পিনু যদি কোনো বাজে লোকের হাতে পড়ে।

সবাই ইফতার করার পর নামাজ শেষ করে আলোচনা করছে- কোথায় যেতে পারে পিনু?

অবশেষে যখন চারদিক অন্ধকার হয়ে এলো, তারও একঘণ্টা পর পিনু ফিরে এলো, সঙ্গে পিনুর হোম টিউটর রাজু স্যার।

পিনুকে দেখে সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মা পিনুকে জড়িয়ে ধরে চরম মমতায় বুকে টেনে নিল।

রাজু স্যার বলল, ওকে আমি স্কুলের পাশে মসজিদের গেটের কাছে পাই। হারিয়ে গেছে এটা আমি জানতাম না।

পিনুর মা পিনুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘এতক্ষণ কোথায় ছিলি, বাবা?’

পিনুর অবাক করা উত্তর- তার খুব প্রিয় কার্টুন মোটো পাতলুর মোটো তাকে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। আমি যে এত চিকন, মাছ-মাংস, শাকসবজি, দুধ ডিম খেতে চাই না- এগুলো মোটো সব জানে। আমাকে এগুলো খাওয়ার পরামর্শ দিল। আজ থেকে এ খাবারগুলো নিয়মিত খাব। মোটো আমাকে এও বলেছে, এগুলো নিয়মিত খেলে তুমি আমার মতো মোটা হয়ে যাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে।

- সবাই অবাক বিস্ময়ে পিনুর কথাগুলো শুনছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close