নূরজাহান নীরা

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

মোহনীয় রূপ জারুল ফুলে

সবুজ শ্যামল দেশ আমাদের। এই সবুজের মাঝে যে মায়া আছে, যে সৌন্দর্য আছে তা আর কোথাও নেই। আমাদের মাঝে ঋতুবৈচিত্র্যের পরিবর্তন যে সৌন্দর্য নিয়ে আসে, তা এই প্রকৃতিকে ঘিরেই, এই সবুজকে ঘিরেই। আর এই প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তোলে নানা রকম ফুল। সেই ফুলের মাঝে একটি হচ্ছে জারুল।

জারুলকে বলা হয় বাংলার চেরি। চোখ ভরে যায় তার রূপ দেখে। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে ধরা যখন উষ্ণ হয়ে ওঠে, তখন সেই উষ্ণতাকে ম্লান করে দিয়ে হেসে ওঠে জারুল ফুল। জারুলের রঙে মুগ্ধ হয়ে কবি আহসান হাবিব তার স্বদেশ কবিতায় লিখেছেন-

‘মনের মধ্যে যখন খুশি

এই ছবিটি আঁকি,

এক পাশে তার জারুলগাছে দুটি হলুদ পাখি।’

প্রয়াত কবি এন্ড্রু কিশোর গেয়েছেন-

ওগো বিদেশিনি

তোমার চেরি ফুল দাও

আমার শিউলি নাও

দুজনে প্রেমে হই ঋণী...।

এই গানে কত মানুষের মনে অজান্তেই দোলা দিয়ে গেছে বাংলার চেরি ফুল। হয়তো চোখের সামনে জারুল দেখেও বুঝতে পারেনি সেই দোলায়িত ফুল এই জারুল। যার মোহনীয় রূপে মুগ্ধ হতে হয়।

গাঢ় সবুজ পাতার মাঝে মাথা উঁচু করে আছে থোকায় থোকায় জারুল ফুল। একসঙ্গে অনেক ফুল ফোটে। পুরো গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে। গাঢ় বেগুনি ও গোলাপি জারুলে চোখ আটকে যায়। মোহনীয় সৌন্দর্যের এ ফুল দেখে চলতে চলতে থমকে যায় না, এমন মানুষ কমই আছে। শত ক্লান্তির মধ্যেও একটু চোখ তুলে দুদণ্ড দাঁড়িয়ে যায় পথিক। গাঢ় ঝোপাল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে শোভা ছড়ায় জারুলের বেগুনি পাপড়ি। এমন মায়াবী দৃষ্টিনন্দন রঙের দৃশ্যে নজর কাড়ে সবারই। বৃষ্টিতে জারুল ফুলের গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ছে টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা। পথের ধারে, পুকুরপাড়ে, খেতের আইলে যেন এ দৃশ্যই এখন। জারুল গ্রীষ্মকালে ফোঁটা শুরু হলেও শরৎকাল পর্যন্ত থাকে। এটি পাতাঝরা বৃক্ষ। শীতকালে পাতা ঝরে যায়। বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মকালে ফুল আসা শুরু হয়। গ্রীষ্মণ্ডবর্ষা-শরৎ- তিন ঋতুকে রাঙিয়ে নিজ সৌন্দর্য বিলিয়ে যায় জারুল। সুশোভিত এই জারুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও এটি ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলগাছের দেখা মেলে। জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওসা।

নামটির প্রথমাংশ এসেছে সুইডেনের অন্যতম তরু অনুরাগী লেজারস্ট্রমের নাম থেকে। স্পেসিওসা লাতিন শব্দ, যার অর্থ সুন্দর।

জারুলের লেজারস্ট্রমিয়া ইনডিকা নামে ছোট একটি প্রজাতি রয়েছে, যা বৃহত্তর সিলেট ও কিশোরগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।

জারুলগাছ মধ্যমাকৃতির পত্রমোচী বৃক্ষ। ম্লানধূসর মসৃণ কাণ্ডবিশিষ্ট জারুল ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পাতা বড়, পুরু ও গাঢ় সবুজ। ৬-৮ ইঞ্চি দীর্ঘ, লম্বাটে ও মসৃণ। এর পাতার পিঠের রং ঈষৎ ম্লান। গাছের শাখা-প্রশাখা, ডালপালা খুবই শক্ত। ফুলের বোঁটাও শক্ত। মঞ্জরী অনিয়ত, শাখায়িত, বহুপৌষ্পিক ও প্রান্তিক। জারুলের ফুলের বেগুনি বর্ণ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি শোভনীয় তার পাপড়ির নমনীয় কোমলতা। বেগুনি ও গোলাপি রঙের ফুল থাকলেও আমাদের দেশে বেগুনি রং বেশি দেখা যায়। অনেক সময় সাদার কাছাকাছি এসে পৌঁছায় কিছু ফুলের রং। জারুল ফুলগুলো থাকে শাখার ডগায়, পাতার ওপরের স্তরে। প্রতিটি ফুলের থাকে ছটি করে পাপড়ি, মাঝখানে পুংকেশরের সঙ্গে যুক্ত হলুদ পরাগকোষ। থোকায় থোকায় ফোটে ফুল। বোঁটার গোড়া থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ডগায় যায়। ফুল শেষে গাছে বীজ হয়। বীজ দেখতে গোলাকার ও কালো। জারুলবীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। জারুলগাছের বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিসের জন্য উপকার। এ ছাড়া জ্বর-সর্দি কাশিতেও বেশ উপকার। জারুলগাছ থেকে কাঠ করতে চাইলে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ বছর সময় লাগে। এর কাঠের রং লালচে ধরনের। জমি চাষের লাঙল, ঘর নির্মাণ, নৌকা ও আসবাবপত্র তৈরিতে এই কাঠ ব্যবহার করা যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close