শরিফুল ইসলাম

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

দিপুদের ‘শহীদ মিনার’

সময় ফাগুন মাস! ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়ায় বনে বনে ফুলে ফুলে ভরে উঠছে গাছের কোমল ডগা। মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করছে মধু। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন নতুন বই নিয়ে ঝিনাই খালের বাঁধ পেরিয়ে বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছে, সবার মনেই কেমন জানি একটু খুশি খুশি ভাব!

গাছে ফুটছে নয়া ফুল, হাতে আছে নতুন বই আবার যাচ্ছে নতুন শ্রেণিকক্ষে, খুশি তো থাকবেই তাই না?

ঝিনাই খালের বাঁধ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দিপুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, দিপুর বয়স ১১ বছর, সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। পড়ালেখায় খুব একটা ভালো না থাকলেও দিপুর মাথার ব্রেন একদম টাটকা। তবে খুব একটা কথা বলে না দিপু, একটু চুপচাপ স্বভাবের, তাই তো পড়ালেখাও ওই রকম চুপচাপ স্বভাবের।

আবার দিপুর মুখ চুপচাপ থাকে বলেই যে তার হাত স্তব্ধ থাকে তা কিন্তু নয়, দিপুর হাত যথেষ্ট চঞ্চল।

দিপু ছোটবেলা থেকেই নানা রকম ফেলনা জিনিস থেকে অনেক ধরনের খেলনা তৈরি করত, ছবি আঁকত, আবার মাঝে মাঝে তো নিজে নিজেই ছড়া কাটত মনের সুখে। দিপু তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন তার ভাঙা বিমানের এক অংশ দিয়ে একটি ব্যাটারি চালিত ফ্যান তৈরি করে, যা দিয়ে গ্রীষ্মের ঋতুতে ঠান্ডা হাওয়া গ্রহণ করছে আবার বাল্বের সাহায্যে আঁধার ঘর আলোকিত করছে। এভাবেই সে একেক সময় একেক জিনিস তৈরি করে থাকে।

আজ নতুন শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে দিপু, রহিত, রানু, রাসেল, লালু আর মুন্না। লালু, রাসেল, মুন্না এবার তৃতীয় শ্রেণিতে আর রহিত ও রানু চতুর্থ শ্রেণিতে। এখানে সবার বড় দিপু, দিপুকে সবাই দিপু ভাই নামেই জানে। ওরা সবাই দিপুর কথা মেনে চলে। ফাগুন মানেই শীতের শেষের দিক আর শীতের শেষ দিক মানেই তো আসন্ন ফেব্রুয়ারি।

আর ফেব্রুয়ারি মাসেই শুরু হয় শহীদ মিনার সংস্কারের কাজ। দিপুদের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বেশ দূরে একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেখানে পালন করা হয় মাতৃভাষা দিবস। ছাত্রছাত্রীরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে খালি পায়ে চলে আসে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা কেউ আসে না, আসে না তার কারণ হলো তাদের শহীদ মিনার নেই, তারা এসে কোথায় ফুল দেবে?

দিপুদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। যাতায়াতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মতোই দিপুদের মনেও সাধ জাগে ভোরে খালি পায়ে এসে ভাষাশহিদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর কিন্তু বিদ্যালয় যে অনেক দূরে। তারপর দিপু, রহিত, রানু, রাসেল, লালু আর মুন্না একসঙ্গে বসে বুদ্ধি-পরামর্শ শুরু করল, কী করা যায়? ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা যে জানাতেই হবে। একসময় দিপু বলল, চলো আমরা সবাই আমাদের বাড়ির পাশে কোনো এক ফাঁকা স্থানে শহীদ মিনার স্থাপন করি? তখন রহিত বলে উঠল, এত ইট পাথর সিমেন্ট পাব কোথায়? অনেক টাকা লাগবে তো, আর আমরা কি তৈরি করতে পারব? দিপু উত্তরে বলল, শুধু কি ইট পাথর দিয়েই শহীদ মিনার বানাতে হবে নাকি? এটা শুনে সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, তাহলে ...?

দিপু বলল, তোমরা সবাই তোদের বাড়ি থেকে মোটা মোটা পাটকাঠি নিয়ে আসবে আর বাকি কাজ আমি করব, তোমরা শুধু আমাকে সাহায্য করবে। তারপর বাড়ি ফিরে তাদের কাজ শুরু করে দিল এবং একপর্যায়ে তাদের শহীদ মিনার তৈরি সম্পূর্ণ হলো এবং একুশে ফেব্রুয়ারির ভোরবেলা সবাই ‘একুশে ফেব্রুয়ারি অমর হোক, অমর হোক’Ñ এই স্লোগানে ফুল দিতে লাগল ভাষাশহিদদের নবনির্মিত শহীদ মিনারে। এভাবেই শেষ হলো দিপুদের ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close