প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

তাপপ্রবাহে আম, ধানের ক্ষতি

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা তাপপ্রবাহে হা-হুতাশ করছেন মানুষ। গরমে জনজীবনই যে শুধু দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাই নয়, পাশাপাশি আম, ধান ও পোলট্রি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সারা দেশে গরমের কারণে প্রতিদিন প্রায় ১০ শতাংশ মুরগি মারা পড়ছে বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। ডিম উৎপাদন কমেছে প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ। পুষ্ট হওয়ার আগেই গাছ থেকে ঝরে যাচ্ছে গ্রীষ্মের অন্যতম প্রধান ফল আম। বোরো ধানের উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা আছে কৃষি বিজ্ঞানীদের।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. আরমিন ভূইয়া মানুষ যেমন অধিক গরমে হিটস্ট্রোক করে, তেমন ধানের ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতিকে আমরা ‘হিট শক’ বলছি। তাপপ্রবাহ ৩৫ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে এবং সে সময় বৃষ্টি না হলে ধানগাছে হিটশক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। উচ্চ তাপমাত্রা থেকে বাঁচার জন্য ধানগাছ ‘নিজস্ব কুলিং সিস্টেম’ তৈরি করে। মাঠে পানি থাকলে সেটা ব্যবহার করে উদ্ভিদটি নিজের তাপমাত্রা তিন-চার ডিগ্রি কমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু তাপমাত্রা বেশি থাকলে গাছ থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায় এবং হিটশকের শিকার হয়। এ সময় বৃষ্টি হয়নি বলেই চলতি বোরো মৌসুমে ক্ষতির আশঙ্কা কৃষিবিদদের।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘যেসব খেতে ধান এরই মধ্যে পরিপক্ব হয়ে গেছে, সেখানে চিটা হবে না। তবে যারা একটু দেরিতে ধান রোপণ করেছেন, তাদের জমিতে চিটা দেখা দিতে পারে। ধান গাছে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় স্বাভাবিক পরাগায়ন হয়, তখন তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পোলেন (রেণু) শুকিয়ে পরাগায়ন ব্যাহত হয়। এতে চিটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার বলেন, চিটা পড়ার হার নির্ভর করবে তাপমাত্রা কত বাড়ছে বা কতদিন ধরে উচ্চ মাত্রায় থাকছে তার ওপর। ঠিকমতো সেচ বা পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে চলতি মৌসুমেও ফসলে গরমের প্রভাব এড়ানো সম্ভব বলে দাবি দুই ইনস্টিটিউটের দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার। ড. আরমিন ভূইয়া বলেন, ‘ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই দু-তিন ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। কিন্তু ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কতটা উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিচ্ছে?

ড. ভূইয়া জানান, ধান গবেষণা ইনস্টটিউট এ পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ১০৮টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে খরা সহিষ্ণু জাত যেমন আছে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের জাতও আছে। তাছাড়া বোরো পরাগায়নের সময়টাকে আরেকটু এগিয়ে আনার লক্ষ্যে গবেষণা চলছে বলে জানান তিনি। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ক ম গোলাম সারওয়ার অবশ্য বলেন, শুধু গমের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা সহনশীল জাত উদ্ভাবনের গবেষণায়ই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। উচ্চ ও নিম্ন উভয় তাপমাত্রাই সহনশীল এমন ধানের জাত যাতে উদ্ভাবন করা যায়, সেজন্য কাজ করতে হবে।’

আমের ফলনও বিঘ্নিত হচ্ছে বৃষ্টিহীনতায়। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, আম পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য বৈশাখের গরম আবহাওয়ার বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। রাজশাহীতে অবস্থিত ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এপ্রিল-মে মাসে সাধারণত তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রিতে ওঠে। এবার তার চেয়ে একটু বেশি হলেও খুব একটা ক্ষতিকর হতো না। যদি একইসঙ্গে বৃষ্টিও হতো। বৃষ্টির অভাবে মাটি শুষ্ক থাকায় প্রয়োজনীয় পানি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমগাছ। এতে বোটায় একটি বিশেষ স্তর তৈরি হয়, যা বোটাকে দুর্বল করে ফেলে। এতে অপুষ্ট অবস্থায় আম ঝরে যাচ্ছে। দীর্ঘ তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টির অভাবে এবার কাঙ্ক্ষিত ফলন থেকে বঞ্চিত হতে পারেন আম চাষিরা।

মুরগি পালনে অনুকূল তাপমাত্রা ১৭ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু দেশে চলতি মাসের তাপমাত্রা এর প্রায় দ্বিগুণ। ফলে প্রতিদিনই স্থানীয় গণমাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মুরগির মৃত্যুর খবর আসছে। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য, সারা দেশে প্রতিদিন সাত থেকে ১০ শতাংশ ‘চিকেন পপুলেশন’ মারা যাচ্ছে। ডিম উৎপাদন কমেছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য অঞ্জন মজুমদার বলেন, ‘ডিম পাড়া বা পরিণত বয়সের মুরগি হিটস্ট্রোকের শিকার হয় বেশি। এতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক। বড় মুরগি মারা গেলে প্রায় ৭০০-৮০০ টাকার ক্ষতি হয়। বড় খামারগুলোয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়। তাই তাপমাত্রার হেরফেরে সেখানে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু বাজারের আশি শতাংশই প্রান্তিক খামারিদের ওপর নির্ভরশীল যাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থা নেই।’ বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে জানা যাচ্ছে, অতিরিক্ত তাপের ফলে মুরগির বিপাকক্রিয়া ভালো হয় না। যার ফলে মুরগির খাদ্যের প্রতি অনীহা দেখা যায়। ঠিকমতো খাবার গ্রহণ না করায় মুরগির বৃদ্ধি কমে যায়, ডিম উৎপাদনও হ্রাস পায়- বলেন অঞ্জন মজুমদার। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close