মেহেদী হাসান

  ২৩ মার্চ, ২০২৪

মিরপুরে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম

রাজধানীর বেইলি রোডের ঘটনায় ঢাকা মহানগরের আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক (ব্যবসা) প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন এক আইনজীবী। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট মহল। মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আবাসিক ভবনে গোপনে চালানো বাণিজ্যিক কার্যক্রম উচ্ছেদ অভিযান শুরু রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। মিরপুর পল্লবীর লালমাটিয়া এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরে একটি আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে ভবনের ৯০ শতাংশ জায়গাজুড়ে চলছে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার। ভবনে বসবাসকারী এক ব্যক্তি আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে রাজউক ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের কপি প্রতিদিনের সংবাদের হাতে এসেছে।

রাজউকে দেওয়া অভিযোগপত্রে দেখা যায়, লালমাটিয়া এলাকার ১১ নম্বর সেক্টর ই-ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ১২১ নম্বর বাসাটি আবাসিক হিসেবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মিত হলেও ব্যবহার করা হচ্ছে বাণিজ্যিক পোশাক কারখানা ও কেমিক্যালযুক্ত পোশাক প্রিন্ট কারখানা হিসেবে। রাজউকের দেওয়া ভবনের নকশা পরিবর্তন করে ভেতরের পার্টিশন (বিভক্ত দেয়াল) পরিবর্তন করা হয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সরু সিঁড়ি ছাড়া পুরো ভবনে নেই কোনো নির্গমন স্থান। কারখানায় প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ করলেও ফায়ার এক্সিটের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। এ অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে কারখানা উচ্ছেদ চেয়েছেন অভিযোগকারী।

বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ঢাকা উত্তর জোনাল ম্যানেজার জহিরুল হক জানান, বাড়িটি আবাসিক হিসেবে ৬ তলা পর্যন্ত করার অনুমোদন রয়েছে। বর্তমানে আবাসিক ভবনের অনুমোদন ছাড়া ৭-তলা করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশের একটি ইউনিটসহ চতুর্থ থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত ‘মাঈন ফ্যাশন’ নামের এক পোশাক কারখানাকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভবনের সব বিদুৎ সংযোগ ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) থেকে বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

যার সত্যতা নিশ্চিত করেছে ডেসকোর এক বিদুৎ সংযোগকারী কর্মচারী। বর্তমানে আবাসিক ভবনটি বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা আছে বলেও জানান বিএইচবিএফসি কর্মকর্তা।

ভবনের তিন থেকে সাততলা পর্যন্ত বড় পোশাক কারখানা রয়েছে বলে জানান দ্বিতীয় তলার কেমিক্যাল প্রিন্ট কারখানার মালিক হান্নান। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমার প্রিন্ট কারখানা ছোট। ওপরে তিনতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত বড় গার্মেন্ট রয়েছে। অনেক মানুষ কাজ করে।’ ভবন ছাড়ার নোটিস পেয়েছেন কি না- জানতে চাইলে হান্নান বলেন, ‘রাজউক থেকে কর্মকর্তারা এসেছিলেন। তারা ভবন ছাড়ার জন্য নোটিস দিয়ে গেছেন। কিন্তু ভবনের মালিক আমাকে কিছু বলেনি। আমি বলেছি, কিছুদিন সময় দিতে হবে।’ তৃতীয় তলার রেজওয়ান ফ্যাশনের মালিক রেজাউল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমাকে ভবন ছাড়ার কোনো নোটিস দেওয়া হয়নি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। বাড়িওয়ালার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়নি। তারা ভবন ছাড়ার বিষয়ে কথা বলেনি। যদি ছাড়তে বলে, তাহলে কোরবানি ঈদের আগে ছাড়া সম্ভব হবে না।’ এছাড়া ভবনের চতুর্থ থেকে সপ্তম তলায় মাঈন গার্মেন্টের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয়নি।

রাজউকের জনসংযোগ ও প্রটোকল বিভাগের পরিচালক শামীমা মোমেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, রাজউকের অনুমোদন ব্যত্যয় করে ছয়তলা ভবন সাততলা করা হয়েছে। ভবন মালিক আবাসিক অনুমোদন নিয়ে নিচতলায় কার পার্কিং এরিয়ায় ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছেন, যা ইমারত নির্মাণ আইন-১৯৫২-এর ৩বি ধারা অনুযায়ী ও ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাদের ওপর নকশাবহির্ভূত নির্মিত অংশ অপসারণসহ আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহৃত মালামাল আগামী সাত দিনের মধ্যে অপসারণ করতে নোটিস জারি করা হয়েছে। নিজ উদ্যোগে এগুলো অপসারণ করার পর রাউজককে তারা জানাবে। সেসঙ্গে নকশাবহির্ভূত অংশ অপসারণের বিষয়ে পল্লবী থানার ওসি বরাবর নোটিসের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার মোখলেছুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘রাজউক থেকে নোটিসের ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ স্যার বলতে পারবেন। নোটিস হাতে পেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ জানতে চাইলে অভিযুক্ত ভবন মালিক মেহেদী হাসান আরমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘রাজউকের পক্ষ থেকে কোনো নোটিস আমি এখনো হাতে পাইনি। যদি ভবন ছাড়ার নোটিস হাতে পাই, তখন সেটি দেখব। আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম আমরা একা চালাই না। ঢাকা শহরে অনেক চলে। রাজউক যদি ব্যবস্থা নিতে পারে, তাহলে নেবে। আমি আপনার সঙ্গে আর কথা বলতে চাই না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close