নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ মার্চ, ২০২৪

বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে সরকার

রমজান এলেই আলোচনায় আসে বাজার ‘সিন্ডিকেট’। অভিযোগ আছে, ব্যবসায়ীরা অনেক সময় বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। অর্থাৎ পণ্যের উৎপাদনে কোনো ঘাটতি না থাকা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকার পরও তারা গুদামজাত করে এবং সংকটের কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করেন। কয়েকদিন পরপর কোনো না কোনো পণ্য সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছে। কখনো মুরগি, পেঁয়াজ, আটা, সয়াবিন তেল, কাঁচামরিচ, ডিম, খেজুর; এমনকি ডাব ও রোগীকে দেওয়া স্যালাইনও বাদ যাচ্ছে না। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার।

রমজানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সরবরাহের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা একটা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুদদারি করে পচিয়ে ফেলবে কিন্তু বাজারে দেবে না- এ জাতীয় অবস্থার সৃষ্টি করে। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেন সাধারণ মানুষের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারে, সেদিকে সবাইকে যথাযথভাবে নজর দিতে হবে।’ এছাড়া আটটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন চেম্বার থাকবে। যাতে দীর্ঘ মেয়াদে পণ্যগুলো মেইনটেন করে বাজারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে কাজ করছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মাছ-মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে বাজার মনিটিং কার্যক্রম চালাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া রমজান উপলক্ষে নিম্নআয়ের ১ কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে চালসহ টিসিবির পণ্য (ভোজ্যতেল ও ডাল) সাশ্রয়ীমূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম বিক্রয় ৭ মার্চ থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রমজান মাসে সরকারকে বিব্রত করার জন্য সিন্ডিকেট থাকতে পারে। এখন আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে এসব অপকর্মের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা আছে কি না।’

সিন্ডিকেটের প্রভাব বিস্তারের পেছনে বাংলাদেশের ইনফরমাল বাজার ব্যবস্থাপনাকে দুষছেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, সাধারণত ফরমাল বাজার সিস্টেমে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে যত এজেন্ট কাজ করে, তাদের সবাই নিবন্ধিত থাকেন বা প্রত্যেকের আলাদা বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর থাকে। অনিবন্ধিত কেউ এ বাজারে লেনদেন করতে পারে না। সেইসঙ্গে সরকারের নজরদারি সংস্থা, বাজারের প্রতিটি পর্যায়ে লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখতে পারে। কে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ রাখছেন, কে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করছেন বা বিক্রি করছেন, কী দামে বিক্রি করছেন। সব তথ্য সরকারের হাতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় এর কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। এ কারণে সরকারের কোনো সংস্থা বাজারের কোনো লেনদেন নজরদারি করতে বা তথ্য রেকর্ড করতে পারে না। ফলে নিয়ন্ত্রণ আরোপও সম্ভব হয় না।’

গোলাম মোয়াজ্জে আরো বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সরকারের ঘোষিত দামে বিক্রি করছেন না, লেনদেনের রিসিট রাখছেন না। মজুদের তথ্য গোপন করছে। এভাবে তারা বাজারে একটি অযাচিত প্রভাব বিস্তার করছে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে আলাদাভাবে টাস্কফোর্স গঠন করা এবং সেই টাস্কফোর্সের পরামর্শে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশমালা তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close