গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪

উপজেলা নির্বাচনের তফসিল শিগগির

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল চলতি মাসের যেকোনো দিন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তী যে কমিশন সভা বসবে সেদিনই এ নির্বাচনের তফসিল দেওয়া হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পরের সভাটি হবে ইসি ২৬তম সভা। এ সভায়ই উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তফসিল হবে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে, এবার এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের ধাপ কমিয়ে তৃতীয় থেকে চতুর্থ ধাপের মধ্যে সারা দেশের উপজেলার ভোটসম্পন্নের টার্গেট নির্ধারণ হয়েছে। তবে প্রথম ধাপের ভোট হবে আসন্ন রমজানের আগেই যা নিশ্চিত করেছেন কমিশন সংশ্লিষ্টরা। মার্চের ১২ তারিখ থেকে রমজান শুরুর সম্ভাব্য সময় ধরা আছে; চাঁদ দেখাসাপেক্ষে শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। পরবর্তী ধাপগুলোর ভোট হবে ঈদুল ফিতরের পরই।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ব্যবহার করা হবে কিনা সেটাও কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এ লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার সিইসি ও অন্য কমিশনারদের কাছে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার প্রস্তাব রাখার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেন, উপজেলার ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সবার সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে; সে লক্ষ্যে রবিবার আলোচনার প্রস্তাব রাখবেন তিনি। তবে সংসদ নির্বাচনে ভোট হয়নি ইভিএমে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, উপজেলায় ভোট আসন্ন। আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসিনি। তবে আগামীকাল (আজ রবিবার) সিইসি ও অপর কমিশনারদের সঙ্গে একত্রে বৈঠকে বসলে এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার প্রস্তাব রাখব। ইভিএমে কিংবা কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে ওই বৈঠকে দিন তারিখ ঠিক হবে। পরবর্তী কমিশন সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আসন্ন রমজান শুরু হবে মার্চ মাসে। এর আগেই কয়েক ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপের ভোটটি করার চিন্তা রয়েছে ইসির। ঈদুল ফিতরের পর বাকিগুলোর নির্বাচন হবে। সম্ভবত এবার তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের মধ্যে নির্বাচন শেষ করা হতে পারে। তবে আগামী সপ্তাহে কমিশন সভা আহ্বান করা হবে; সেখানেই সবকিছুই চূড়ান্ত হয়ে তফসিল হতে পারে জানান কমিশনের এই অতিরিক্ত সচিব।

উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদ পূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। এই ক্ষেত্রে আগামী নভেম্বর থেকেই শতাধিক উপজেলা পরিষদের ভোট অনুষ্ঠানের ক্ষণগণনা শুরু হয়। বাকিগুলোর সময় শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।

ইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বর্তমান কমিশনের ২৫টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী যে সভা হবে সেটি ২৬তম। এখনো পরবর্তী সভা আহ্বান করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেননি। আগামী সপ্তাহের শুরুতে এ সভা আহ্বান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নির্বাচনী মালামাল কেনাকাটা থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একত্রে কেনাকাটা করা হয়। ভোটার ও ভোটকেন্দ্রেও চূড়ান্ত। এখন অপেক্ষা তফসিল ঘোষণার।

এবার যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে সেটি ষষ্ঠতম। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ পঞ্চম উপজেলার ভোট হয়েছিল পাঁচ ধাপে। ভোট হওয়া উপজেলা পরিষদের সংখ্যা ছিল ৪৫৫টি । প্রথম ধাপে ৮২টি, ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ১২৩টি, ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে ১২২টি, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে ১০৬টি এবং ১৮ জুন পঞ্চম ধাপে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশে বর্তমানে উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি।

উপজেলা পরিষদের শাখার তথ্য মতে, স্থানীয় সরকারের সম্মতি পেয়েছে ইসি। সংসদ বাদে স্থানীয় স্তরের নির্বাচনের ভোট আয়োজনের জন্য মন্ত্রণালয়ের সম্মতির দরকার হয়। সেটিও সম্পন্ন। পঞ্চম উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোট হয়েছিল ৮২টির। এবার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সবগুলোর নির্বাচন প্রথম ধাপে করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সে অনুযায়ী শতাধিক উপজেলায় প্রথম ধাপে ভোট হতে যাচ্ছে। পরবর্তী ধাপগুলোতে নির্বাচনী সহিংসতাসহ বিজয়ী হওয়ার প্রচেষ্টা থেকে ভোটের আগে মরিয়া হয়ে উঠেন প্রার্থীরা। তাই কমিশন যতদূর সম্ভব অধিকাংশ উপজেলার ভোট প্রথম দ্বিতীয় ধাপের মধ্যে শেষ করার টার্গেট নিয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ১৭(১) (গ) ধারা অনুসারে পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে, ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী ১৮০ (একশত আশি) দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আলোকে মার্চ থেকেই শুরু হচ্ছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের ভোট।

তথ্য বলছে, প্রয়াত সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপজেলা পরিষদ গঠন করে নির্বাচন কার্যক্রম হাতে নেন। এ হিসেবে প্রথম উপজেলা পরিষদের ভোট হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার উপজেলার ভোট হওয়ার পর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এনে উপজেলা পরিষদ বাতিল করে দেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করেন। তার সরকারের মেয়াদে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ২০১৪ সালে চতুর্থবার, ২০১৯ সালে পঞ্চমবার উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচনে ১৪টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ট্যাব ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে জুন-জুলাই মাসে সাত ধাপে ৪৮৬ উপজেলার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময়কার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গেলে ভারপ্রাপ্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক। পাঁচটি ধাপের নির্বাচন তার তত্ত্বাবধানেই অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হলেও দলীয় সমর্থনে ভোট হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close