অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ২১ মে, ২০২৪

সংবাদ সম্মেলনে ইআরএফ

ডেপুটি গভর্নরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ নিয়ে ডেপুটি গভর্নর খুরশীদ আলম সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে বিভ্রান্তিকর বলছে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। একইসঙ্গে প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপ তুলে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয় বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

ইআরএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের আগের মতো অস্থায়ী পাস নিয়ে নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার চাই। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা ও একাধিকবার চিঠি চালাচালি করা হয়েছে, কিন্তু সমাধান হয়নি। যদি নিয়মতান্ত্রিক আলোচনায় প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ জানান, প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে কোনো বিষয় মাঠে নামেনি ইআরএফ। যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলনে মাঠে নামা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন দাবি না মানলে আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারে কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন জানিয়ে ইআরএফ সভাপতি বলেন, আমাদের জানতে হবে অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট অনেক সমৃদ্ধ। সেখানে অর্থনীতির সব সূচকের নিয়মিত আপডেট ছাড়াও বোর্ড মিটিংয়ের কার্যবিবরণী, বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ সব ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হয়। কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন করলে দ্রুত রেসপন্স করা হয়। আবার এসব দেশের আর্থিক খাতের সুশাসনের মাত্রা অনেক উঁচুতে। পদ্ধতিগত কারণে সেখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য আড়াল করা কঠিন। এছাড়া বেনামি ঋণ, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী বা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কেউ কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারে বলে আমাদের জানা নেই। এখন বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত রেখে শুধু সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আসলে কী তথ্য আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে, আমরা সে প্রশ্ন রাখতে চাই।

দাবি না মানলে কী কর্মসূচি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, আগামী জাতীয় বাজেটের আগে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে বাজেটের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে অবস্থান ও সমাবেশ করা হবে। এছাড়া দাবি না মানা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও মুখপাত্রের সব ধরনের অনুষ্ঠান বর্জন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডামূলক বক্তব্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকব- এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা সবাইকে পালন করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি এক ডেপুটি গভর্নর পঞ্চগড়ে বলে আসছেন, সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই। এমন মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাই। আগামীতে এ ধরনের প্রোপাগান্ডামূলক বক্তব্যও আমরা বর্জন করব।

লিখিত বক্তব্যে ইআরএফ সভাপতি আরো বলেন, বর্তমান সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার কথা বলে আসছে। অথচ ৫৩ বছরের প্রথা ভেঙে হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যা সরকারের অবস্থানের বিপরীত। গত ২১ মার্চ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক অলিখিতভাবে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বিষয়ে সমাধান চেয়ে ইআরএফের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়েছে এবং দুই দফা চিঠিসহ বিভিন্নভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রায় ২ মাস হলেও সমস্যার সমাধান না করে এখন বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় আজকের এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। এখানে আমি একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই। সাংবাদিকরা এর আগে নিজের কার্ড প্রদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারতেন। এখন তা বন্ধ করা হয়েছে। হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় নানা গুজব ডালপালা মেলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন হারানোর কারণে আর্থিক খাতের দুরবস্থার কথা বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ, গবেষকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে জানিয়ে ইআরএফ সভাপতি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, তদারকি ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা, বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপে নীতির ধারাবাহিকতা রাখতে না পারার বিষয়টি সবার জানা। ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে তড়িঘড়ির কারণে অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের বর্তমান তারল্য সংকটের বিষয়টি সবার জানা। এসব সমস্যার সমাধান না করে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জনমনে আতঙ্ক আরো বাড়বে। তথ্যপ্রবাহ আটকানোর চেষ্টা দেশের জন্য বড় কোনো বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারো জন্য যা কাম্য নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close