নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ মে, ২০২৪

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা

অভিযান-হাঙ্গামার পর বহাল আগের অবস্থা

অভিযান ও হাঙ্গামার পর রাজধানীতে আবারও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে এ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিকে দ্বিতীয় দিন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা। তাদের বিক্ষোভের জেরে যানজটে দুর্ভোগ পোহায় নগরবাসী।

গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়কমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শুধু ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন। তবে ২২টি মহাসড়কে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে।

জানা গেছে, গত ১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে সড়কে শৃঙ্খলার জন্য রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। পরে এ ধরনের রিকশা বন্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গত রবিবার রাজধানীর মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকরা। গতকালও স্থানে স্থানে চালকরা বিক্ষোভ করে। তার মধ্যেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আগের মতো চলাচলের বাধা কাটে সড়কমন্ত্রীর ঘোষণার পর।

দ্বিতীয় দিনে সড়ক অবরোধ : রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল আবারও রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ করেন চালকরা। সকাল পৌনে ১০টায় রামপুরা, বাড্ডা, শাহজাদপুরের মূল সড়ক অবরোধ করে তারা। এতে যানচলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। তা পরে রূপ নেয় তীব্র যানজটে। মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, অটোরিকশা চালকরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিলেন। আধা ঘণ্টার মতো সড়কে ছিলেন। পরে তাদের মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় ব্যাটারি-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ।

ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, ৪ মামলায় আসামি প্রায় ২৫০০ : ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গত রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে চালকরা। এ সময় মিরপুর ও পল্লবীর কালশীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেলে কালশীর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ চালকরা। এর আগে সকালে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষাভ করে তারা। এ সময় ১০ থেকে ১২টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। দীর্ঘ সময় সেখানে যানচলাচল বন্ধ থাকায় যানজটে দুর্ভোগে পড়েন অনেকে। এসব অভিযোগে আন্দোলনরত অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে তিন থানায় চারটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। পল্লবী থানায় দুটি, কাফরুল থানায় একটি ও মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।

মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, মিরপুরের পল্লবী থানায় মামলা দুটি করা হয়। একটি মামলা পল্লবী থানা পুলিশ ও আরেকটি মামলা পল্লবী ট্রাফিক জোন থেকে করা হয়। অন্যদিকে কাফরুল থানা ও মিরপুর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। রবিবার দিনভর আন্দোলন-অবরোধের নামে পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এসব মামলা করা হয়। মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজারের বেশি অটোরিকশা চালককে। এসব মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

পল্লবী থানার ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, পল্লবী থানায় করা পৃথক দুই মামলায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সির সাব্বির আহমেদ বলেন, মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কাফরুল থানার ওসি ফারুকুল আলম জানান, কাফরুল থানায় করা মামলায় ৬০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ জনকে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার বিকেল থেকে শনিবার পর্যন্ত ২ হাজার ২৪১টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ২৩৯টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ১১৩টি ইজিবাইক জব্দ করার পর ডাম্পিং করা হয়। চালকদের ভাষ্য, এতে রুটি-রুজির ওপরে আঘাত এসেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close