নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ মে, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় আসছে

সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু রৌমারীতে ঝড়ে ২৫০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ফসলের ক্ষতি

আগামী ২৬ মে দুপুর ১২টার পর থেকে ২৭ মে সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ জেলায় প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কানাডার সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ২১ ও ২২ মের মধ্যে লঘুচাপের শক্তি অর্জন করতে পারে; ২২ ও ২৩ মের মধ্যে নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপের শক্তি অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং ২৪ মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অর্জন করতে পারে।’

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল যদি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ঊড়িষ্যা রাজ্যের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত করে, তবে স্থালভাগে আঘাতের সম্ভাব্য সময় হবে ২৫ মে সন্ধ্যার পর থেকে ২৬ মে সন্ধ্যার মধ্যে। পক্ষান্তরে ঘূর্ণিঝড়টি যদি বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করে, তবে সম্ভাব্য সময় হবে ২৬ মে দুপুর ১২টার পর থেকে ২৭ মে সন্ধ্যার মধ্যে।’ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বাংলাদেশের ওপরে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ২৪ মে থেকে, যা ২৮ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বাংলাদেশের ওপর মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ২৫, ২৬ ও ২৭ মে। অপেক্ষাকৃত হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ২৪ ও ২৮ মে। ২৩ মে থেকেই সমুদ্র উত্তাল শুরু হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান পলাশ।

সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বজ্রপাতে তিন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের পূর্ব চারগাঁও খেয়াঘাটের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও (গণেশপুর) গ্রামের আনছার উদ্দিনের ছেলে দুলন মিয়া (২৮), বাহাদুরপুর গ্রামের মুসলিম মিয়ার ছেলে কুদ্দুস মিয়া ও অন্যজনের নামণ্ডপরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় আরো কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা সবাই চেলা নদীতে বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজ করতেন। ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মুস্তাফা মুন্না বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় বজ্রপাতে মেহের জামাল (৫০) নামে এক দর্জি নিহত হয়েছেন। উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ওয়াপদা সড়কে গত রবিবার রাত ১০টায় এ ঘটনা ঘটে বলে উলিপুর থানার ওসি গোলাম মর্তুজা জানান। নিহত মেহের জামাল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড়ের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা।

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ঘূর্ণিঝড়ে ২৫০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ফসলের ক্ষতি : রবিবার রাত ৯টায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে রৌমারীর ৬ ইউনিয়নে ২৫০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া গাছপলা, বিদ্যুতের লাইন লণ্ডভণ্ডসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তীব্রতায় ভেঙে গেছে গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি। নষ্ট হয়েছে কৃষিজমির ৩৫০ হেক্টর জমির ধান, ২ হেক্টর পাট, ৩ হেক্টর তিল ও ২৭ হেক্টর শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত চরবন্দবেড় গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমার একমাত্র অবলম্বন ঘরটি আকস্মিক ঝড়ে উড়ে গেছে। এখন কোথায় থাকবেন বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি।’ যাদুরচর গ্রামের মাজেদ মিয়া বলেন, ‘ধারদেনা করে একটি নতুন ঘর তুলেছিলাম আমি। কিন্তু গতকালের (রবিবার রাতে) ঝড়ে ঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।’ একইভাবে কুটিরচর গ্রামের শামেজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ঘরের চালটি উড়ে গেছে।’

জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘রাতে ঝড়ের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জরুরিভাবে লোকজন দিয়ে খুঁটি ও তার ঠিক করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবে।’ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাসছুদ্দিন বলেন, ‘উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নের মধ্যে ঝড় হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৫০টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘সকালে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close