নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

শীতের কাঁপন দেশজুড়ে

রাজধানীতে ঘন কুয়াশা * শৈত্যপ্রবাহ চার জেলায়

রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। ঘন কুয়াশার প্রতিটি সকাল বলছে জেঁকে বসেছে শীত। দেশের চার জেলায় বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজধানীতে ছিল ঘন কুয়াশা। দেশের অন্যত্রও একই অবস্থা ছিল। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে আরো কমেছিল। কিশোরগঞ্জের নিকলী ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

ঘন কুয়াশার ফলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, কুয়াশার কারণে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৮টি ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শনিবার থেকেই কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা। তবে ১৭-১৮ জানুয়ারির দিকে দেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে দেশের কোথাও কোথাও বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গতকাল সকালে বলেছেন, শীতের তীব্রতা শনিবার থেকে কমে আসবে। তবে ঘন কুয়াশা খুব তাড়াতাড়ি কমবে না। আগামী তিন দিন কুয়াশা এমন থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সকাল ৯টায় আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শুক্রবার মধ্য রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

দেশের চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সেগুলো হলো কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী ও চুয়াডাঙ্গায়, ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নিকলীতেই, ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো গতকাল ঢাকাতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরো কমেছে বৃহস্পতিবারের তুলনায়। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কিশোরগঞ্জের হাওর-অধ্যুষিত নিকলী উপজেলায় শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে এ এযাবৎকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এটিই। একই তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা চুয়াডাঙ্গায়ও। চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা এ অঞ্চলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে অনেককে।

নাটোরের সিংড়ায় কনকনে শীতের সঙ্গে হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। খড়কুটাতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণে চেষ্টা করছেন দরিদ্র মানুষ। এদিকে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও কাঁপছে ঠাণ্ডায়। গবাদিপশুর শীত নিবারনে চটের বস্তাসহ কম দামের কম্বল কিনে পশুদের শরীরে জড়িয়ে দিচ্ছেন পশু পালনকারীরা।

ঠাকুরগাঁও জেলায় টানা চার দিন ধরে দেখা নেই সূর্যের। তীব্র শীতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। দিনের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধানও কমে এসেছে। গতকাল সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য মতে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট গরম কাপড়ের অভাবে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া দিনমজুররা। ঘোড়াঘাটে মেঘলা আকাশ ও ঘন কুয়াশার কারণে দেখা মেলেনি সূর্যের। ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানগুলোকে হেডলাইন জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে দেখা গেছে। কুড়িগ্রামে একটানা বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষি কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দিনমজুররা যেতে পারছেন না কাজে।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, চৌহালী উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। কনকনে ঠাণ্ডায় নৌকা পারাপার হতে তারা পড়েছে বিপাকে। নৌকার যাত্রী আবদুল খালেক জানান, জরুরি কাজে শীত উপেক্ষা করে উপজেলায় আসতে হয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হাড় কাঁপানো শীতে নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিভিন্ন স্থানে খড়কুটাতে আগুন লাগিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। গরম কাপড়ের দোকানগুলোয়ও প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা গেছে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে হাসপাতালগুলোয় ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শীতে গবাদিপশু কাহিল হয়ে পড়েছে। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে ভিড় করছেন মানুষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close