নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

রোজার আগেই খেজুরের দাম লাগামহীন

ফলমূলকে বিলাসি পণ্যে অন্তর্ভুক্ত করায় বছর ব্যবধানে দেশে খেজুরের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। উচ্চশুল্কের কারণে আমদানি হচ্ছে চাহিদার তুলনায় নামমাত্র। এতে রমজানে পণ্যটির ভয়াবহ সংকট তৈরির আশঙ্কা আমদানিকারকদের। এ অবস্থায় বাজার ঠিক রাখতে শুল্ক কমানোর সঙ্গে এলসি জটিলতা দূর করার তাগিদ তাদের। রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায় অন্য মাসের চেয়ে অন্তত ১২ গুণ। চাহিদার সঙ্গে বাড়ে দামও। অথচ বছর ব্যবধানে এবার এই পণ্যের দাম এখনই বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।

রাজধানীর বাজারের সবচেয়ে কম দামি খেজুর হিসেবে পরিচিত জিহাদি ও দাবাস। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়। বছর ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। শুধু জিহাদি বা দাবাস নয়, সব খেজুরের দামই বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৪০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ টাকা, বরই খেজুর ৪০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা।

ক্রেতারা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে খেজুরের দাম। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। রোজার আগেই আকাশচুম্বী এ দাম ভোগাবে রমজান জুড়ে। এই দাম বৃদ্ধির জন্য খেজুর আমদানিকারকদের কারসাজিকে দায়ী করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। এতে কমে গেছে বেচাকিনি। তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, বিলাসপণ্য বলে এতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ, এর সঙ্গে রয়েছে আরডি, এআইটি ও এটি’র বোঝা। দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই দরকার হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন। এ বছর এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার টনের এলসি খুলতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা; আর আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার টন। পথে রয়েছে ১০ হাজার টন।

এ অবস্থায় এলসি জটিলতা, শুল্ক বাধা দূর করা না হলে আসন্ন রমজানে খেজুরের ভয়াবহ সংকট তৈরির আশঙ্কা আমদানিকারকদের।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি কেজি খেজুর আমদানি করতে শুল্ক দিতে হচ্ছে ২৭৫ থেকে ২৮০ টাকা। পাশাপাশি করা যাচ্ছে এলসি। এতে আমদানি কমায় দাম বাড়ছে। শুল্ক কমাতে কয়েক দফায় ব্যবসায়ীরা দাবি জানালে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে গত নভেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি এনবিআর।

এদিকে রমজানে খেজুরের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে শুল্ক বেশি থাকায় এবার খেজুর আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছেন খেজুর আমদানিকারকরা। তাই খেজুরের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গত বুধবার আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমúোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, খুচরা ও পাইকারি ফল ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ বিষয়ে সচেতনতামূলক সভায় এ আহ্বান জানান খেজুর আমদানিকারকরা।

তারা বলেন, খেজুরের ওপর আরোপ করা আমদানি শুল্ক না কমানো হলে রমজানের জন্য খেজুর আনা আমাদের জন্যে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এতে যদি রমজানের বাজারে পর্যাপ্ত খেজুর না থাকে, তখন কিন্তু সাধারণ মানুষ সরকারকে দুষবে। এটি নিয়ে পরে ধর্মীয় ইস্যু তৈরি হতে পারে।

আমদানিকারকদের দেওয়া তথ্যমতে, শুধু রমজান মাসেই দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে ৬০ হাজার টনের বেশি খেজুর প্রয়োজন হয়। যেখানে অন্য সব মাস মিলে খেজুরের চাহিদা ২০ হাজার টনের মতো।

এ সময় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আসন্ন রমজানে খেজুরের দাম যেন দ্বিগুণ বা তিনগুণ না হয়, সে জন্যই এই সভা। আপেল ও কমলা ভাগাভাগি করে খাওয়া গেলেও খেজুর সেভাবে খাওয়া যায় না। তা ছাড়া খেজুর রমজানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যা করা প্রয়োজন, আমরা তা করব।

খেজুরের বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক আরো বলেন, আমদানি করা খেজুরের এমআরপি থাকতে হবে। কারণ ৩০০ টাকার খেজুর যখন ৩ হাজার টাকা হয়, তখনই বাজারে অনৈতিক কার্যকলাপ হয়। সেটি হতে দেওয়া যাবে না। এ বছর আমরা পাকা ভাউচার ছাড়া কোনো ফল আমদানি দেখতে চাই না। ফল বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় উভয় মূল্য উল্লেখ থাকতে হবে।

হিমাগারের তাপমাত্রা ঠিক আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, হিমাগারগুলোয় অনেক সময় দেখেছি- খেজুরগুলো কয়েক বছরের পুরোনো।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে খেজুর আমদানি হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত খেজুর আমদানি হয়েছে কেবল দেড় থেকে দুই হাজার টন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close