ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৫ নভেম্বর, ২০২২

জয় ধরে রাখতে চায় নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর

জয় পেতে মরিয়া কাতার-সেনেগাল

ফিফা বিশ্বকাপে আল থুমামা স্টেডিয়ামে আজ গ্রুপ-‘এ’র গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মুখোমুখি হতে যাচ্ছে স্বাগতিক কাতার ও আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন সেনেগাল। দুই দলই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে। যে কারণে দুই দলেরই লক্ষ্য টুর্নামেন্টের প্রথম পয়েন্ট সংগ্রহ করে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা। এদিকে আজ খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় গ্রুপ-‘এ’র নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর। এ মুহূর্তে গ্রুপের অপর দুই দল সেনেগাল ও কাতারকে পিছনে ফেলে প্রথম ম্যাচে জয়ী হয়ে উপরের দুটি স্থান দখল করে আছে নেদারাল্যান্ডস ও ইকুয়েডর। আর তাই একে অন্যকে হারিয়ে দুই ম্যাচে দুই জয় নিয়ে গ্রুপে নিজেদের অবস্থানটা আরো শক্তিশালী করতে চায় দুই দলই।

কনমেবল অঞ্চলের বাছাইপর্বের সবচেয়ে দুর্বল দল ইকুয়েডরের কাছে প্রথম ম্যাচে পাত্তাই পায়নি স্বাগতিক কাতার। কিন্তু এখনো কাতারের সামনে সুযোগ রয়েছে মানুষের ধারণাকে ভুল প্রমাণের। টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থেকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিল কাতার। সেপ্টেম্বরে চিলির সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করার পর একে একে কাতার হারিয়েছিল গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পানাম ও আলবেনিয়াকে। এসবই কাতারকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স সানচেজের অধীনে কাতার নিজেদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছে। এত বড় আসরে অতীতে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক কিছুতেই তাদের মানিয়ে নেওয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যে কারণে প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের কাছে পরাজয় অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে স্বাগতিক দেশ হিসেবে কাতারই প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পর প্রথম কোনো স্বাগতিক দল হিসেবে ইকুয়েডরের পোস্টে কোনো শট নিতে ব্যর্থ হয়েছে কাতার। ম্যাচ শেষে সানচেজ দাবি করেছেন, তার দল ‘নার্ভাস’ ছিল। বড় আসরে মানিয়ে নিতে হলে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। ২০১৯ সালে এশিয়ান কাপ জয়ী দলটিকে মাঠের পারফরম্যান্সে খুব একটা পারদর্শী মনে হয়নি। মানসিকতার সমস্যাও এখানে বড় একটি কারণ। এশিয়ান কাপে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোল করেছিল কাতার। ২০২১ গোল্ড কাপেও আমন্ত্রিত দল হিসেবে খেলতে নেমে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলে টুর্নামেন্টের সর্বাধিক গোল দিয়েছিল। কিন্তু ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচে দলের আক্রমণ ভাগের দুই কান্ডারি আলমোয়েজ আলি ও আকরাম আফিফকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় পরাজয়ে স্বাগতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণের আর কিছুই বাকি থাকবে না কাতারের। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে তাদের খেলার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

এদিকে কাতারের মতোই পরাজয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও সোমবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অনেক দিক থেকেই নিজেদের যোগ্যতার যথার্থ প্রমাণ দিয়েছে আফ্রিকান নেশন্স কাপ বিজয়ী সেনেগাল। দলটির আক্রমণভাগ নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা ছিল, কিন্তু ডাচদের বিপক্ষে বেশি সরব ছিল তাদের রক্ষণভাগ। যদিও চেলসি গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডির দুই ভুলে দুটি গোল হজম করতে হয়েছে সেনেগালকে। মেন্ডি শেষ পর্যন্ত বাদ পড়লে তার স্থানে দেখা যেতে পারে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের সেনি ডিয়েংকে। ৮৪ মিনিটে কোডি গাকপোর গোলে প্রথম পিছিয়ে পড়ে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নরা। আর এতেই প্রমাণিত হয় ডাচদের বিপরীতে সেনেগালের রক্ষণভাগ কতটা অপ্রতিরোধ্য ছিল।

আফ্রিকান নেশন্স কাপেও তাদের রক্ষণভাগের রেকর্ড ছিল চোখে পড়ার মতো। বছরের শুরুতে শিরোপা জয়ের পথে তারা মাত্র দুটি গোল হজম করেছিল। এরপর বিশ্বকাপের আগে ছয় ম্যাচে হজম করেছে মাত্র তিন গোল। কোচ আলিউ সিজের দলের জন্য মূল ভরসা সাদিও মানেকে না পাওয়াটা অনেক বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। এমনকি মানে ফিট হয়ে ফিরে এলেও সিজের জন্য নিয়মিত দলের আক্রমণভাগ সাজানো নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাবে। বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতা ফামিরো ডাইহিউও ইনজুরি সমস্যায় রয়েছেন।

এ দিকে কাতারের গোলরক্ষক সাদ আল শিব প্রথম ম্যাচে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। দলের ব্যাকআপ দুই গোলরক্ষকই প্রাক-টুর্নামেন্ট প্রীতি ম্যাচগুলোতে খেলেছেন। রোববার যে চারজন খেলোয়াড় হলুদ কার্ড পেয়েছেন তার মধ্যে আল শিব একজন। যে কারণে ডাচদের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে চারজনেরই নিষেধাজ্ঞা পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ তালিকায় অপর তিনজন হলেন দুই স্ট্রাইকার আলি ও আফিফ ও মিডফিল্ডার করিম বুডিয়াফ।

অধিনায়ক হাসান আল হেডস ক্যারিয়ারের ১৭১তম ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবেন।

এদিকে সেনেগাল নিশ্চিত করেছে হল্যান্ডের বিপক্ষে পেশির ইনজুরিতে পড়া আব্দু ডিয়ালো সুস্থ হয়ে অনুশীলনে ফিরেছেন। ফোডে বালো-টুরের স্থানে ব্যাকআপ লেফটব্যাক হিসেবে ডিয়ালো রয়েছেন, এটা সেনেগালের জন্য স্বস্তির খবর। তবে নটিংহ্যাম ফরেস্টের মিডফিল্ডার চিয়েকু কুয়াতে পেশির সমস্যার কারণে শুক্রবারের ম্যাচটি মিস করছেন।

এদিকে এবার তৃতীয় মেয়াদে ফন গালের অধীনে নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করা ৭১ বছর বয়সি ফন গাল অবসর ভেঙে ফের ডাচ দলের দায়িত্ব নিয়ে অনেকটাই সাহসী কাজ করেছেন। অতীত সাফল্য বিবেচনায় ফন গালের উপরই আস্থা রাখতে চেয়েছে ডাচরা। ফন গালের অধীনে নেদারল্যান্ডস যদি গ্রুপ-এ’র শীর্ষ দল হিসেবে পরের রাউন্ডে যায় তবে শেষ ১৬তে তাদের প্রতিপক্ষ হবে গ্রুপ-বি’র রানার্সআপ। এক্ষেত্রে ইংল্যান্ড, ওয়েলস, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইরানের মধ্যে যেকোনো একটি দলকে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে। এ মুহূর্তে অবশ্য এতদূর ভাবছে না নেদারল্যান্ডস। তাদের সামনে এখন পরবর্তী প্রতিপক্ষ অসম্ভব প্রতিভাবান ইকুয়েডর।

আজকের ম্যাচ

ওয়েলস-ইরান, বিকাল ৪টা

কাতার-সেনেগাল, সন্ধ্যা ৭টা

নেদারল্যান্ডস-ইকুয়েডর, রাত ১০টা

ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র, রাত ১টা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close