নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সংশোধন হচ্ছে পদ্মা সেতু রেলপথের নকশা

কয়েক মাস আগে পদ্মা সেতুর সড়কপথে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এ সেতুতে রেলওয়ের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় চালু হয়নি ট্রেন। ২০২৪ সালের মধ্যেই রেলওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত সূচনা করতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যেই রেলওয়ের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।

মূল পদ্মা সেতুতে রেলপথ বসানোর কাজ মাসখানেক আগে উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে সেতুর স্প্যানের ভেতরে ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে ট্রেন চলার পথ। এসব স্ল্যাবের ওপর বসানো হবে পাথরবিহীন ব্রডগেজ রেলপথ।

তবে বিপত্তি বেঁধেছে রেলওয়ে স্ল্যাবের উচ্চতা নিয়ে। যেসব রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে, সেগুলোর উচ্চতা কোথাও কোথাও রেলপথের জন্য নির্ধারিত নকশার চেয়ে বেশি। বিদ্যমান নকশায় সেতুতে রেলপথ বসালে তা সমতল হবে না। কাজ শুরুর আগে জরিপ করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়েছে। তাই পদ্মা সেতুর জন্য করা রেলপথের নকশায় সংশোধন করা হচ্ছে। এদিকে নকশা জটিলতার কারণে কাজ বিলম্বিত

হলে প্রকল্পটি আরো ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের। তবে এ সমস্যার কারণে রেলপথ বসানোর কাজ সময়মতো শেষ করতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে নকশা সংশোধনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের সঙ্গে সড়কপথের নকশা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল।

জরিপে উঠে এসেছে, কয়েকটি স্থানে রেলওয়ে স্ল্যাবের উচ্চতা নির্ধারিত নকশার চেয়ে ৪০-৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত বেশি রয়েছে। বিদ্যমান নকশায় রেলওয়ে স্ল্যাবের ওপর রেলপথ বসালে তা উঁচু-নিচু হয়ে যাবে, যা ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী হবে না। চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়বে ট্রেন।

চীনের কাছ থেকে ২৬৭ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। পদ্মা সেতুর স্প্যানের ভেতরে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজটি করেছে রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার সিআরইসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (এমবিইসি)। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, জরিপে রেলওয়ে স্ল্যাব অসমতল হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়লেও শুরুতে তা মানতে চাননি এমবিইসির প্রকৌশলীরা। পরে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা মিলে জরিপের বিষয়বস্তু খতিয়ে দেখার পর রেলওয়ে স্ল্যাব অসমতল হওয়ার বিষয়ে একমত হন।

রেলপথ বসানোর জায়গাটি অসমতল হলে কী সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, রেলের জন্য একটা সমান উচ্চতার জায়গা প্রয়োজন। রেলপথের তলটা হতে হবে নিখুঁত। রেলপথের তল নিখুঁত করতে না পারলে সে রেলপথে ট্রেন পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর সঙ্গে মাওয়া প্রান্তে ২৬৬ মিটার ও জাজিরা প্রান্তে আরো ২৬৬ মিটারসহ সব মিলিয়ে ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার এলাকায় রেলপথ বসানো হবে।

নকশা সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রধান প্রকৌশলী (ট্র্যাক অ্যান্ড ওয়ার্কস) আবদুল জলিল বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর জন্য জরিপ করেছি। এতে দেখা গেছে, রেলওয়ে স্ল্যাবের সঙ্গে রেল ট্র্যাকের উচ্চতায় কিছুটা কমবেশি রয়েছে। এজন্য এখন নকশা সংশোধন করা হচ্ছে।’

নকশা সংশোধনের কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হতে পারে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্মাণকাজ বিলম্বিত হবে কি না, তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। সংশোধিত নকশা বুঝে পাওয়ার পর বলা যাবে। তবে এ সমস্যার কারণে রেলপথ বসানোর কাজ সময়মতো শেষ করতে কোনো সমস্যা হবে না।’

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সেজন্যই একটু সময় নিয়ে সমস্যাটি সমাধানের কাজ চলছে। রেলপথের কাজ শেষ করতে একটু দেরি হলেও অসুবিধা নেই। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যেই সব কাজ শেষ করতে পারব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close