প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিশ্বনেতাদের মহামিলন লন্ডনে

রানির রাজকীয় শবযাত্রা

রাজকীয় শেষকৃত্যের আয়োজনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ বিদায় জানিয়েছে ব্রিটেন। রাজকীয় অথচ ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ আড়ম্বর ও আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে রানি এলিজাবেথকে শেষ বিদায় জানানোর আয়োজন করা হয়। রানির শেষকৃত্যের আয়োজনে বিভিন্ন দেশের সম্রাট, বাদশাহ, রাজা-রানি, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীদের মহামিলন ঘটেছে। এদিকে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্তিমযাত্রার দৃশ্য সরাসরি দেখতে লন্ডনের রাস্তার পাশে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। এ শোকযাত্রা ভালোভাবে দেখা যাবে এমন জুতসই জায়গা খুঁজে পেতে অনেকে সেখানেই রাত কাটিয়েছেন। রানির শেষযাত্রা দেখতে কেউ এনেছিলেন হাতে তৈরি তাঁবু, কেউ সিøপিং ব্যাগ আবার কেউ বাতাস ঢুকিয়ে ফোলানো বিছানা। অনেকে সঙ্গে করে ফ্লাস্কভর্তি চা নিয়ে এসেছিলেন।

গত ৮ সেপ্টেম্বর বালমোরাল প্রাসাদে মৃত্যু হয় ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। এরপর সেখান থেকে ওয়েস্টমিনস্টার হল পর্যন্ত ৯ দিনের যাত্রা শেষে অবশেষে চূড়ান্ত গন্তব্যের পথে যান রানি। ব্রিটেনে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য সবশেষ হয়েছিল ৬০ বছর আগে উইনস্টন চার্চিলের ক্ষেত্রে। বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে, শেষকৃত্যের পরিকল্পনায় রানি ব্যক্তিগতভাবে কিছু সংযোজন করেছিলেন।

যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সোমবার বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায়) ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়। এর আগে ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে এক শোকযাত্রার মধ্য দিয়ে মরদেহবাহী কফিন গির্জায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে আরেক শোকযাত্রার মধ্য দিয়ে কফিন নেওয়া হয় উইন্ডসর ক্যাসেলে। শোকযাত্রার সময় রানির কফিন দেখতে আগে থেকেই রাস্তার পাশের বেষ্টনীর ওপারে ভিড় করে হাজারো মানুষ।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কর্মসূচিতে অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন। এতে ধর্মীয় বাণী পাঠ করেন আর্চ বিশপ জাস্টিন ওয়েলবি। সদ্য নিযুক্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসও বাণী পাঠ করেন। এরপর শেষ পোস্ট বিউগল বাজানো হয় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে। এরপর দেশজুড়ে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে অ্যাবে থেকে হাইড পার্কে ওয়েলিংটন আর্কে রানির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।

৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুর পর ৭০ বছরের রাজত্ব শেষ হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। এখন চির বিশ্রামে শায়িত। স্কটল্যান্ডের বালমোরালে মৃত্যুর পর তার জন্য তৈরি বিশেষ কফিনটি রাখা হয় সেখানকার সেন্ট জাইলস ক্যাথিড্রালে। রাজকীয় শোভাযাত্রা করে আনা হয় কফিনটি। রানির রাজত্বকালের মতোই কফিনটির মহিমাও রাজকীয়।

৩২ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল কফিনটি। ইংলিশ ওককাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় রানির কফিনটি। রাজকীয় রীতি মেনে কফিনটির গায়ে সীসার পরত দেওয়া আছে। সেই কফিনটি বহন করেন আটজন বাহক। সীসার পরত থাকায় কফিনের ভেতর ও বাইরে বাতাস ও আর্দ্রতা প্রবেশ করতে পারে না। এ কারণেই দীর্ঘ সময় ধরে দেহ সংরক্ষণ করা যায়। আর একই কারণে কফিনটি অনেক ভারী।

কফিনটি কে তৈরি করেছিলেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ১৯৯১ সাল থেকে লন্ডনে রাজপরিবারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালনা করে লেভারটন অ্যান্ড সন্স। সংস্থাটি জানিয়েছে, ওই বছরই উত্তরাধিকারসূত্রে তারা কফিনটি পেয়েছিল।

কফিনের ভেতর রানির দেহের সঙ্গে কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র রাখা হয়। সেগুলো যাতে নিরাপদে থাকে, তার জন্য এর ঢাকনাটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। বার্মিংহামের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কফিনটির পিতলের হাতল তৈরি করেছে। এটি বিশেষভাবে রাজকীয় ক্যাসকেটের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আর কফিনটি সম্পর্কে লেভারটন অ্যান্ড সন্সের মালিক অ্যান্ড্রু লেভারটন বলেন, এটা এমন এক কফিন, যা এক দিনে তৈরি করা সম্ভব নয়।

গত বছর মৃত্যু হয়েছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপের। তার জন্য যে কফিনটি তৈরি করা হয়েছিল, রানির কফিনটি হুবহু এক রকমের। প্রিন্স ফিলিপকে লন্ডনের পশ্চিমে অবস্থিত উইন্ডসরের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে সমাহিত করা হয়েছিল। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকেও তার পাশেই সমাহিত করা হলো। তথ্য সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি ও ইউএসএ টুডে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close