নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ আগস্ট, ২০২২

বঙ্গবন্ধু ছিলেন নৌপথ উন্নয়নের পথপ্রদর্শক

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেমন পরস্পর অভিন্ন, তেমনি নদণ্ডনদীসহ প্রাকৃতিক জলসম্পদ ও নৌপথে পরিবহন ব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে এ দেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর সঙ্গে মিশে আছেন কালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এককথায় নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল প্রথম পথপ্রদর্শক। এ কারণেই হয়তো অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছিলেন, ‘যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান, তত দিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’

নৌপথের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের রেখে যাওয়া ‘খনক’ নামের একটিমাত্র ড্রেজার দিয়ে বিশাল আয়তনের অভ্যন্তরীণ নৌপথের নিয়মিত পলি অপসারণ ও নদী খনন সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু তার সংক্ষিপ্ত শাসনামলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের জন্য দুদফায় নেদারল্যান্ডস থেকে সাতটি উন্নত মানের ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। যে গুলো এখনো বিআইডব্লিউটিএর বহরে যুক্ত ও সচল রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, নদীমাতৃক কৃষিপ্রধান ও প্রাকৃতিক মৎস্যনির্ভর প্রিয় মাতৃভূমিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে আত্মনির্ভরশীল করতে অমূল্য জলসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার অনস্বীকার্য। সেজন্য নদণ্ডনদী সচল রাখা, নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও উন্মুক্ত জলসম্পদ রক্ষা করা আবশ্যক। স্বাধীনতাণ্ডপরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনসহ নানা ঝুঁকি মোকাবিলায় শত ব্যস্ততা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নদী খননে মনোযোগী ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে নেদারল্যান্ডস থেকে আনা জলযান বা ড্রেজারগুলো হলো- ডেল্টা-১, ডেল্টা-২, ড্রেজার-১৩৫, ড্রেজার-১৩৬, ড্রেজার-১৩৭, ড্রেজার-১৩৮ ও ড্রেজার-১৩৯। এরমধ্যে প্রথম দুটি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে শুভেচ্ছাস্বরূপ দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। অন্য পাঁচটি ১৯৭৫ সালে সে দেশ থেকে ক্রয় করা হয়েছিল।

জাতির পিতা বাংলাদেশের অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবন নিয়েও ভাবতেন- এমনটি উল্লেখ রয়েছে সাংবাদিক আশীষ কুমার দের লেখা বই ‘নদী রক্ষা ও নৌ-খাতের উন্নয়ন : বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’তে। তার লিখিত বইয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান সম্পর্কে বেশ ধারণা পাওয়া যায়। দূরদর্শী নেতা বঙ্গবন্ধু সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদগ্রীব ছিলেন। যেহেতু আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে শিল্প ও বন্দরনগরী খুলনাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের নৌ-যোগাযোগ অপরিহার্য ছিল।

বঙ্গবন্ধু তার উপলব্ধি থেকে মোংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে বিকল্প নৌপথ সৃষ্টির উপায় খুঁজতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনে ছুটে যান তৎকালীন নৌ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী জেনারেল আতাউল গণি (এমএজি) ওসমানী, যিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় দপ্তরে বসে ওসমানীকে পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি বঙ্গবন্ধু। বিকল্প নৌপথ খুঁজতে পরবর্তী সময়ে নিজেও ছুটে গিয়েছিলেন মোংলায়।

রাষ্ট্রনায়ক ও সেনানায়কের পরিদর্শন শেষে লুপ কার্টিং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঘষিয়াখালী থেকে রামপাল উপজেলার বেতিবুনিয়া পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ খাল খনন করা হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল বা নৌপথ। যার মূল লক্ষ্য ছিল সুন্দরবনকে অক্ষত রেখে মোংলা সমুদ্রবন্দরের পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বের বিকল্প পথ আবিষ্কার করা। চালুর অল্প দিনের মধ্যেই নতুন নৌপথটি সার্বিক বিবেচনায় হয়ে ওঠে জনপ্রিয়।

বাংলাদেশ-ভারত নৌবাণিজ্য প্রটোকল রুটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় চ্যানেলটি আন্তর্জাতিক নৌপথের স্বীকৃতি পেয়েছে। শেলা নদীর ওপর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ায় পরিত্যক্ত বিষাক্ত জ্বালানি তেল ও ভয়াবহ শব্দদূষণ থেকে সুন্দরবন রক্ষা পেয়েছে। মোংলা-ঘষিয়াখালী বিকল্প চ্যানেল সৃষ্টি বঙ্গবন্ধুর ওই পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী, যা ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত একটি বাণিজ্যিক সংস্থা। সংস্থাটির মূল কাজ এর নিজস্ব বহরে থাকা সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনা করা। সমুদ্রপথে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিএসসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেসব পণ্যের একটি বড় অংশ এই সংস্থার জাহাজগুলোতে পরিবহন হয়ে থাকে। এসব কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরে এখন বিএসসির মালিকানাধীন বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ দেখা যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close