নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ মে, ২০২২

শ্রমিক নেতাদের প্রধানমন্ত্রী

দাবি থাকলে বলুন বিদেশিদের কাছে কেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, বিদেশিদের কাছে গিয়ে নালিশ না করে সমস্যা থাকলে আমাকে বলুন। আমি শুনব। মালিকদের দিয়ে যদি কিছু আদায় করতে হয়, তা আমি আদায় করে দেব। আমি পারব। গতকাল রবিবার সকালে মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান এ ইলাহী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই দেশের শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ?তিন দফা বেতন বৃদ্ধি করেছি।’

বাংলাদেশ আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো একসময় সম্পূর্ণ বিদেশি অনুদাননির্ভর ছিল। আজ আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি, যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে পদ্মা সেতু। এই সেতু সম্পূর্ণ সরকারের টাকায় নির্মাণ করেছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন উন্নত হবে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। পরে একের পর এক যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা যদি এটা অনুসরণ করে, এই বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারখানা সুরক্ষার জন্য আমরা শিল্প পুলিশও গঠন করে দিয়েছি। সারা পৃথিবীতে ১০টি গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি আছে। তার মধ্যে সাতটি কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে। সেটা করার জন্য যা যা দরকার ছিল- ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে, কোনোটা সম্পূর্ণ করমুক্ত, শুল্কমুক্ত করে দিয়েই কিন্তু আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগটা মালিকদের করে দিয়েছিলাম। আমাদের শ্রমিকরা যেন সুন্দরভাবে, নিরাপদভাবে কাজ করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়েছি। আমরা যে শ্রমিকদের জন্য এত কাজ করেছি, তার পরও আমরা দেখি যে আমাদের দেশে কতিপয় শ্রমিকনেতা আছেন, তারা কোনো বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করেন। আমি জানি না এই মানসিক দৈন্যতাটা কেন? এর সঙ্গে কি অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত আছে? কোনো দেনাপাওনার ব্যবস্থা আছে? সেটা আমি জানি না।’

নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের সুযোগ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হলে অন্তত আওয়ামী লীগ সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে, অন্তত আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যেকোনো সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারি নিজেরা। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে মালিক এবং শ্রমিক তারা নিজেরা বসে আলোচনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। আমরা নিজের দেশের বিরুদ্ধে বা নিজের দেশের সম্পর্কে অন্যের কাছে কেন কাঁদতে যাব, বলতে যাব। আমরা তো এটা চাই না।’

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প, যেসব উন্নয়ন প্রকল্প একসময় সম্পূর্ণ বিদেশি অনুদানে বা বিদেশি সহযোগিতায় নির্ভরশীল ছিল আজকে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগ আমরা নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে পদ্মা সেতু। নিজেদের অর্থায়নে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের টাকায় এই পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি।’

তিন বছরে দূর করা হবে শিশুশ্রম : বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে কোনো শিশুশ্রম থাকবে না। তবে এখানে একটু ব্যতিক্রম আছে। সেটা হচ্ছে, ট্র্যাডিশনাল কাজ যদি ছোটবেলা থেকে রপ্ত না করে, তাহলে তাদের পৈতৃক কাজগুলো চালু থাকবে না। এ ক্ষেত্রে হাতে-কলমে কিছু শিক্ষা, কিন্তু সেটা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ না। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে কোনো শিশুকে ব্যবহার করা যাবে না। সেটা আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু ট্র্যাডিশনাল ট্রেনিংগুলো তাদের বাবা-মার সঙ্গে বসে বসে তারা করতে পারে।’

নির্বিঘœ ঈদযাত্রায় সন্তুষ্টি : ঈদে সব শ্রেণিপেশার মানুষের বাড়িমুখো হওয়ার প্রসঙ্গটিও উঠে আসে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, এবার নিরবচ্ছিন্নভাবে সবাই যার যার বাড়ি যেতে পেরেছেন এবং ফিরে আসতে পেরেছেন। আমরা যোগাযোগব্যবস্থায় সে রকমই উন্নতি করে দিয়েছি। প্রত্যেক শ্রমিক মজুরিটা ঠিকমতো পেয়েছেন। যারা হয়তো দিতে পারেননি, কিছু দিয়েছেন, আগামীতে দেবেন।’

আর্থিক সহায়তা : মে দিবসের আয়োজনে ১০ শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার হাতে চেক তুলে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। জটিল কিডনি রোগের চিকিৎসায় শ্রমিক রমিজ উদ্দিন আহমেদকে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা। দুই মৃত শ্রমিকের পরিবার পায় দুই লাখ টাকা করে। দুই শ্রমিকের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাসহায়তা হিসেবে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা করে। আর রপ্তানিমুখী শিল্পের মৃত ৫ শ্রমিকের পরিবার পায় ২ লাখ টাকা করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close