গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৫ অক্টোবর, ২০২১

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত

শিক্ষার্থীদের টিকাদানে সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি

শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রমে সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি বলে মনে করেন দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বয়স্কদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছিল চরম অব্যবস্থাপনা। দেখা গেছে, আজ যিনি টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন, পরেরদিনই তার এসএমএস চলে এসেছে। আবার নিবন্ধন করার একমাস পরেও টিকার এসএমএস পাননি অনেকে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি না হয় সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তদারকি বাড়াতে হবে।

এদিকে প্রাথমিকভাবে সরকারের লক্ষ্য দেশের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। এরই মধ্যে ৬০ লাখ টিকা সরকারের হাতে মজুদ আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছে, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিম্নমুখী এবং শনাক্তের হার আড়াই শতাংশের নিচে। তাই টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণ বেশি ওই এলাকাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক প্রো-ভিসি এবং করোনাসংক্রান্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘যে কোনো বয়সের (প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু) মানুষের করোনার টিকা দেওয়া হোক না কেন, কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া তো আছে। তবে যেসব ব্যক্তির পুরোনো ব্যাধি যেমন- অ্যালার্জি, কিডনির সমস্যা আছে, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও বড় ধরনের অসুখের হিস্ট্রি আছে তাদের অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে টিকা নিতে হবে।’

অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার আরো বলেন, ‘টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ছোট-বড় কোনো তফাত নেই। এরপরও ১৮ বছরের নিচে বয়সিদের টিকা নেওয়ার পর কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া টিকা গ্রহণের পর হবে কিনা তা- এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, শিশুদের টিকা দেওয়ার যে উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে তা নির্ভয়ে নিতে পারেন।’

হেলথ অ্যান্ড হোপ কেয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্বে ছয়টি টিকা অনুমোদন আছে। ছয়টির মধ্যে কিউবার টিকাটির প্রচলন কম। বাকি পাঁচটি হলো ফাইজার, মডার্না, কোভ্যাক্স, সিনোভ্যাক্স ও সিনোফার্ম। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশুদের দেওয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকা। এই টিকা দেওয়া হচ্ছে, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্র্রেলিয়া, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। মডার্না দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র আমেরিকাতে। সিনোভ্যাক্স দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র চীনে এবং সিনোফার্ম চীনসহ সংযুক্ত আরব-আমিরাতে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শিশুদের করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা ইতিবাচক। এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, শিশুদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া নিরাপদ ও কার্যকর। ফলে এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।’

ডা. লেলিন চৌধুরী আরো বলেন, ‘আমাদের এখানে ফাইজারের টিকা দিতে গেলে ভ্যাকসিন নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। স্টোরেজের তাপমাত্রা সঠিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে হবে।’

এর আগে করোনার টিকাদানে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ছিল উল্লেখ করে- এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এমনকি গণটিকার সঠিক কাঠামো নির্ধারণ না করে ঘোষণা দেওয়ায় অব্যবস্থাপনা ছিল দৃশ্যমান। আমরা দেখেছি, যেসব মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বেশি ছিল তারা অব্যবস্থাপনার কারণে টিকা নিতে পারেনি। অথচ কম বয়সিরা টিকা বেশি পেয়েছেন। একটি কেন্দ্রে ৩০০ জনের টিকা দেওয়া হবে, সেখানে উপস্থিত হয়েছিল দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। ফলে গণটিকা গণ-সংক্রমণ ও গণ-ভোগান্ত্রির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শিশু ও শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার নামে যাতে গণ-অব্যবস্থাপনা তৈরি না হয়- সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য আমাদের অনুরোধ থাকবে। কারণ টিকা ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকলে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম অসম্পূর্ণতা থেকে যাবে।’

শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্য একই টিকা জানিয়ে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘করোনার টিকার ডোজ বাড়ানো-কমানো নিয়ে এখনো কাজ চলছে। তাই শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি সুরক্ষা অ্যাপসে নিবন্ধন করে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই নিবন্ধন ব্যবস্থা যেন অব্যবস্থাপনায় পরিণত না হয়। কারণ আমরা আগে দেখেছি, একজন গতকাল নিবন্ধন করে আজ এসএমএস পেয়েছে এবং অন্য একজন দুই মাস আগে নিবন্ধন করলেও তার এসএমএস আসেনি। আমার কথা- একজনকে টপকে অন্যকে খুদেবার্তা পাঠানো না হয়; সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ১২ থেকে ১৭ বছরের নাগারিকদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে জন্ম-নিবন্ধন দেখে পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

ডা. লেলিন চৌধুরী আরো বলেন, ‘বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত অর্থাৎ আড়াই শতাংশের নিচে। তাই যেসব এলাকায় এখনো করোনার প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যুর হার বেশি রয়েছে ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিতে হবে টিকা। আর যেসব এলাকায় সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় সেখানে পরবর্তী সময়ে টিকাদান কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এভাবেই পর্যায়ক্রমে টিকাদান সম্পন্ন করতে হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬০ লাখ টিকা আছে। যার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেব। মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার তৈরি নিরাপদ একটি টিকা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে। খোদ আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই টিকা খুবই নিরাপদ। আগামীতে শিক্ষার্থীদের ১ কোটি টিকা দিতে পারব।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে দেশের ২১টি স্থানে শিশুদের টিকা দেওয়া হবে। রাজধানীতে বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close