আরমান ভূঁইয়া

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বাল্যবিয়ে

স্কুলে আর ফেরা হলো না

তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিশু আক্তার (ছদ্মনাম)। করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকাই কাল হয়েছে তার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং বাড়িতে থাকার সুযোগে অভিভাবকরা তাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন কিছুটা জোর করেই। তাই স্কুল খুললেও দেখা যায়নি বাল্যবিয়ের শিকার এ শিক্ষার্থীকে।

মিশুর মতো আরেক শিক্ষার্থী তানিয়া। তিনি একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত বছর ডিসেম্বরে বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন তাকে। মহামারির কারণে বন্ধ থাকা শ্রেণিকক্ষে ৫৪৪ দিন পর প্রাণের স্পন্দন ফিরলেও মিশু-তানিয়াদের মধ্যে ছিল এক ধরনের চাপা কষ্ট।

কথা হয় কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে। তারা বলেন, করোনা সংক্রমণ কেড়ে নিয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। এক শিক্ষার্থীর মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অনেক অভিভাবকের ভেতরে শিক্ষার অভাব থাকায় তারা এসব শিক্ষার মূল্য বুঝে না। তাই অকালেই সন্তানদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে ফেলছে।

মিশুর এক সহপাঠী আসমা জানায়, ‘ওর মতো এমন অনেক বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। স্কুল খোলার পর আমরা সবাই তাদের খুব মিস করছি।’ তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বলেন, দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকেই অভিভাবকরা জোর করে প্রামের বাড়ি নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে ফেলেছেন। গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে জানতে পারি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিশু আক্তারকে পরিবার জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে তার পরিবার অস্বীকার করে। তবে, আমরা জানতে পেরেছি সেই ছাত্রীর বাবা স্ট্রোক করার কথা বলে তাদের এক আত্মীয়র সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন।

রাজাবাজার নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়েও দেখা যায় এমন চিত্র। এই বিদ্যালয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বলেন, করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ছাত্রীকে বিয়ে দিয়েছেন। তারা সংসার করায় এখন আর স্কুলে আসে না। বিনা আক্তার নামে এক ছাত্রী এই স্কুলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার পরিবার জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়। তার এক সহপাঠী সুমাইয়া ইসলাম বলেন, বিনা খুবই ভালো ছাত্রী ছিল। তাদের গ্রামের বাড়িতে বিয়ে হয়। বিয়ের আগে আমাদের ফোন করে অনেক কান্নাকাটি করেছিল। তার ইচ্ছা ছিল অনেক পড়াশোনা করে ডাক্তার হবে। বিয়ের পর কি আর পড়াশোনা করতে পারবে। কথা হয় নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক পরিবার গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। আর এই সুযোগে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আসলে ঢাকার মেয়েরা গ্রামে গেলেই বিয়ে দিয়ে দেয়। আমাদের স্কুল ও কলেজেরও অনেক শিক্ষার্থীকে বিয়ে দিয়েছে তাদের পরিবার। আমরা বেশ কয়েকজন পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিলে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। ঢাকা থাকলে হয়তো আমরা বাধা দিতে পারতাম। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে হলে আমাদের আর কিছু করার থাকে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close