প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৬ আগস্ট, ২০২০

বৈরুতে বিস্ফোরণে নিহত ১০০

৩ বাংলাদেশিও তালিকায়, নৌবাহিনীর ২১ সদস্য আহত

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু ভবন। গত মঙ্গলবার বিকালে বৈরুতের বন্দর এলাকার ওই বিস্ফোরণে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে।

লেবাননের কর্মকর্তারা বলেন, বিস্ফোরণস্থলের ধ্বংসস্তূপ সরাতে এখনো কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। অর্থনৈতিক সংকট আর করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে লড়তে থাকা বৈরুতে বহু বছরের মধ্যে বিস্ফোরণে হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি।

এদিকে বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। নিহতরা হলেন মেহেদী হাসান ও মিজানুর রহমান। অপর একজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা জানান, লেবাননের ভয়াবহ বিস্ফোরণে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে নিয়োজিত। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিকেল সেন্টারে (এইউবিএমসি) ভর্তি করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, আহত অন্যদের ইউনিফিলের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টার/অ্যাম্বুলেন্সযোগে হামুদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তারা আশঙ্কামুক্ত। শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আহত নৌ সদস্যদের চিকিৎসা চলছে।

এ দুর্ঘটনায় নৌবাহিনীর জাহাজ বিজয়ের বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নৌবাহিনী জাহাজ, ইউনিফিল সদর দফদর ও বৈরুতস্থ বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে নৌবাহিনী সদর দফতরের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

ইউনিফিল হেড অব মিশন এবং ফোর্স কমান্ডার ও মেরিটাইম টাস্কফোর্স কমান্ডার সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।

ঘটনার অব্যবহিত পরই বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আল মোস্তাহিদুর রহমান সরেজমিনে বানৌজা বিজয় পরিদর্শন করেন এবং আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর ও যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করেন।

উল্লেখ্য, গত ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে। ভূমধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বর্তমানে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ ইউনিফিলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রয়েছে। জাহাজটি লেবাননের ভূখ-ে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি লেবানিজ জলসীমায় ওই জাহাজ মেরিটাইম ইন্টারডিকশন অপারেশন, সন্দেহজনক জাহাজ ও এয়ারক্র্যাফটের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে উদ্ধার তৎপরতা এবং লেবানিজ নৌসদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।

লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যাকা- নিয়ে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের রায়ের তিন দিন আগে ওই বিস্ফোরণের কারণ শুরুতে স্পষ্ট ছিল না। তবে পরে দেশটির কর্মকর্তারা বিস্ফোরকের গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনা জানান।

প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এক টুইটে বলেন, কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরে মজুদ করে রাখা হয়েছিল, যা কোনোভাবে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড়ু গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে বাড়িঘর এমন কেঁপে ওঠেছিল যে স্থানীয়রা ভাবছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে।

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে মানুষের চিৎকার ও ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙেও অনেকে আহত হন।

বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় বুধবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এ ঘটনাকে বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

তিনি এই দুর্যোগ ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরান, ইসরায়েল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেবাননকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।

যে কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ বৈরুতে

মঙ্গলবার বিকাল, হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকা। বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে গোটা বৈরুত শহরই কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণে বাড়িঘর এমনভাবে কেঁপে ওঠেছিল যে স্থানীয়রা ভাবছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে।

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে মানুষের চিৎকার ও ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙেও অনেকে আহত হন।

কী করে এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটল তার কারণ অনুসন্ধানের পর লেবাননের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। পরিকল্পিতভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। বন্দর এলাকায় রাখা অত্যন্ত বিপজ্জনক বিস্ফোরক রাসায়নিক পদার্থের গুদামে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুদামে ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিস্ফোরক অনিরাপদভাবে রাখা ছিল। কোনো কারণে সেখানে আগুন লাগে আর তা বিস্ফোরিত হয়। এর আগে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছিল আতশবাজির এক গুদাম থেকে এই বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে।

লেবাননের রাষ্ট্র-পরিচালিত ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে, বন্দর এলাকায় একটি বিস্ফোরকের ডিপোতে আগুন লাগার পর ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যে স্থানটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে বন্দরের গুদাম রয়েছে। রাসায়নিকের মজুদ থাকা বন্দরের গুদামে প্রথম আগুন লাগার কথা জানা গেছে।

এদিকে ঘটনার পর পর টুইটারে বিস্ফোরণের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেটিতে বিস্ফোরকের কারণেই এ ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে বলে বোঝা গেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, সেন্ট্রাল বৈরুতের আকাশে ধোঁয়ার লাল কু-ুলী। এর পরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সেন্ট্রাল বৈরুতের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন চিৎকার, ছুটোছুটি করেছে। বহু ঘরবাড়ি ও গাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বাসিন্দাদের তোলা ভিডিও এবং ছবিতে শহরজুড়ে ভবনগুলোর দরজা ও জানালার গ্লাস ভেঙে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

বিবিসিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণের আওয়াজ ছিল তীব্র ও কান ফাটানো।

অনিরাপদভাবে কোনো গুদামে ২,৭৫০ টন বিপজ্জনক বিস্ফোরক মজুদ রাখার বিষয়টি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য চেয়েছেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close