নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

  ১১ অক্টোবর, ২০১৯

আবরার হত্যা

সন্দেহভাজন অমিত ও তোহা গ্রেফতার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা ও হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এমই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তোহা এজাহারনামীয় আসামি। আবরার হত্যাকান্ডের পর তিনি পলাতক ছিলেন। একই ঘটনায় আবরারের রুমমেট মিজানকেও আটক করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে অমিতকে ও গাজীপুরের মাওনা এলাকা থেকে তোহাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে আবরার হত্যায় মোট ১৯ জন আসামির মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ও শামসুল আরেফিন আরাফাতকে এবং আসামির তালিকায় থাকা তোহাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের পর বুয়েটে যখন বিক্ষোভ চলছিল, তখনই পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছিল। তারা ১০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এজাহার দায়েরের পর আরো ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। এজাহারে নাম নেই অথচ পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার হয়েছেন, এমন লোকের সংখ্যা তিনজন। এরা হচ্ছেন অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ও শামসুল আরেফিন। এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক তদন্তে নাম আসায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার হত্যাকান্ড অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টি। একমাত্র কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনই বলা যাবে না। ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে জানতে আমাদের আরো কয়েক দিন সময় লাগবে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাস বা শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে কি না। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি অনেক ঘটনার কারণের মধ্যে একটি কারণ হতে পারে। এটিই একমাত্র কারণ কি না, তা এখনই বলা যাবে না। আরো কারণ থাকতে পারে।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত সাহা। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে বুয়েটে ভর্তি হলেও জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে পদ পেতে নিজেকে আগ্রাসী হিসেবে পরিচিত করেন ক্যাম্পাসে। ফলও পান দ্রুত। পদ পান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক হিসেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সিনিয়রদের মধ্যে একজনকে পেছনে সবচেয়ে বেশি গালমন্দ করেন। তিনি হচ্ছেন অমিত সাহা। তাকে সবেচেয়ে আগ্রাসী দেখা যেত। ২০১১ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ছিলেন অমিত সাহা। এখানে জুনিয়রদের নিয়মিত র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করা হতো।

এদিকে ফাহাদ হত্যাকান্ডে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অমিত সাহার নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ পায়। বুয়েট ছাত্রলীগের ফেসবুক গ্রুপে কাকে র‌্যাগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হতো।

সে রকম একটি ঘটনায় এক সিনিয়রকে চটকানি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো একটি পোস্টে অমিত কমেন্ট করেন, বুয়েট ছাত্রলীগ সুশীল হবে, মারবেও না, বাট কোনো সুশীল নন; পলিটিক্যাল একটা কথা বলার সাহসও রাখবে না। ইদানীং সুশীলদের কথা অনেক বেশি বাড়ছে।

এদিকে, অমিত সাহা আটকের খবরে স্বস্তি পেয়েছেন জানিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। বরকত উল্লাহ বলেন, অমিত সাহা আটকের খবরে আমি স্বস্তি পেয়েছি। এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আমি চেয়েছিলাম ভিসি আবরারের মায়ের সঙ্গে দেখা করুন। তাকে নিয়ে আমি সামনে পথ পরিষ্কার করছিলাম। কিন্তু এলাকার মানুষের বিক্ষোভের মুখে প্রশাসন ভিসিকে নিয়ে দ্রুত গাড়িতে করে চলে যান। ভিসি পারতেন আমার পেছনে এসে আবরারের মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। সেটা তিনি করেননি। তিনি পুলিশের কথামতো চলে গেলেন। শুনলাম, আমার ছোট ছেলেকে (আবরার ফায়াজ) নাকি কারা হুমকি দিয়েছে। মোবাইল ফোনে নাকি সরাসরি এই হুমকি দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নে বরকত উল্লাহ বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই এখন গ্রামের বাড়িতেই আছি। এলাকার পরিস্থিতিও আপাতত ভালো।’

বুয়েটের শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে গত রোববার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালিয়ে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়, সেই কক্ষেরই আবাসিক ছাত্র অমিত। সেদিন আবরারকে ওই কক্ষে ডেকে নেওয়ার আগে অমিত ম্যাসেঞ্জারে আবরারের খোঁজ করেন তার এক সহপাঠীর কাছে, যার স্ক্রিনশট পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার দিনভর বুয়েটে তদন্ত চালিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ, পরে গ্রেফতার করা হয় আরো তিনজনকে। ওই ১৩ জনসহ মোট ১৯ জনকে আসামি করে ঢাকার চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন আবরারের বাবা, যেখানে অমিতের নাম না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা দুদিন আগে বলেছিলেন, অমিত সাহা গত ২ অক্টোবর দেশের বাড়ি গেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুম থেকে মিজানকে আটক করে ডিবি পুলিশ। মিজান ওয়াটার রিসোর্চ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।

গত রোববার মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের লেভেল-২-এর টার্ম-১ এর ছাত্র ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে তিনি স্কুলজীবন শেষ করে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close