নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

গরমে ক্রেতা কম বাজারেই নষ্ট হচ্ছে শাকসবজি

দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তাপপ্রবাহ চলছে। রাজধানী ঢাকায়ও একই অবস্থা। ফলে খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমের এ প্রভাব বাজারগুলোয়ও দেখা গেছে। ক্রেতারা বাজারে আসছেন কম। ফলে কাঁচাবাজারে নষ্ট হচ্ছে শাকসবজি। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে পণ্যের দামে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সয়াবিনের মতো পণ্যের সঙ্গে মাছ ও মাংসের দামও উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল আছে।

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, গড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার সবজি নষ্ট হচ্ছে প্রতি রাতে। যদিও সবজি তাজা রাখতে বরফ ও পানি ব্যবহার করছেন আড়তদাররা। কৃষকের জমি থেকে ঢাকায় আসা সবজি এ তীব্র গরমে কী হাল। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে ৭ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এক ট্রাক শসা এনেছেন মোতালেব মিয়া। তিনি বলেন, গরমে পচে যাচ্ছে তার পণ্য। ভয়ে আগে-ভাগেই ৩০ টাকার শসা বিক্রি করছেন ৭ থেকে ৮ টাকা দরে। মোতালেব মিয়া বলেন, আসতে আসতে তো রাত ১২টা পার হয়ে গেছে। এ পণ্যটা তো সকালে বিক্রি হতো। বাজার খারাপ হলে তো পণ্যটা বাসি হয়ে যাবে। তখন শসাগুলো পচে যাবে। এ সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা লস।

কারওয়ানবাজারের টমেটো, মরিচ, বেগুন ধনেপাতার ব্যবসায়ীদের একই কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ। এক ব্যবসায়ী বলেন, পণ্য পচে গেলে তো ক্ষতি হবেই। ১ কেজি পাতার দাম ১০০ টাকা। ১০ কেজি নষ্ট হয়ে গেলে ১ হাজার টাকা লস। বৃষ্টি নাই, গরমে সব পচে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পথে দীর্ঘ সময় এসব পণ্য পরিবহনে থাকে, সেইসঙ্গে তীব্র গরমে বেশিরভাগ শাকসবজি নেতিয়ে পড়ছে। সতেজ রাখতে খরচ হচ্ছে বাড়তি অর্থ। কারওয়ানবাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্য রুবেল মিয়া জানান, সব প্রতিষ্ঠানকে পণ্য পচে যাওয়া রোধে, দ্রুত বিক্রির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলে দ্রুত পচনশীল পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০, শসা ৭ থেকে ৮, বেগুন ২০, টমেটো ২২ ও মরিচ ৫০ টাকা কেজিদরে। ফুলকপি ১৫ থেকে ২০, লাউ ও কুমড়া প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে।

প্রতি রাতে নগরীর কাঁচাবাজারগুলোয় ২২০ থেকে ২৪০টির বেশি পণ্যবাহী ট্রাক আসে, যা জাগিয়ে রাখে নগরের রাতের অর্থনীতিকে। প্রতি রাতে বিক্রি হয় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার শাকসবজি। তবে তীব্র গরমে সেই বিক্রি কিছুটা কমে এসেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী, তেজগাঁও কলমিলতাবাজার, মগবাজার ও কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, তাপপ্রবাহের কারণে দিনের বেলা বাজারে ক্রেতারা আসছেন না বললেই চলে। অল্প কিছু ক্রেতা বাজারে এলেও তারা মাছ-মাংসের চেয়ে সবজি কিনতে বেশি আগ্রহী। গরমে গরুর মাংসের মতো পণ্যের চাহিদা বেশ কমেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মহাখালী বাজারের মাংস বিক্রেতা মোহাম্মদ ডালিম বলেন, রোজার মধ্যেও প্রতিদিন দুটি গরু বিক্রি করেছি। ঈদের পরে বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। এখন একটা গরু জবাই দিয়ে দুই দোকানে ভাগাভাগি করে বিক্রি করছি। তা-ও ক্রেতারা অতিরিক্ত গরমের কারণে ১-২ কেজির বেশি মাংস নিচ্ছেন না। তবে ক্রেতা না থাকলেও গরুর মাংসের দাম কমেনি। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়। খাসির মাংসের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম অবশ্য অল্প কমেছে। কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে কমে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। সোনালি মুরগির দাম কমেনি, বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকায়। বাদামি রঙের ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১২০ টাকা। সাদা ডিম ১০ টাকা কম।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কমবেশি ৬০ টাকায়। তবে কিছুটা বাড়তির দিকে আদা ও রসুনের দাম। মানভেদে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। নতুন দামের সয়াবিন বাজারে এসেছে, যদিও সরবরাহ এখনো কম। ১ লিটারের বোতলজাত তেলের দাম ১৬৭ টাকা। কারওয়ানবাজারের শাহ মিরান স্টোরের বিক্রেতা মামুন হোসেন বলেন, ঈদের পর থেকে বাজারে ক্রেতার ভিড় কম ছিল। এখন গরমের কারণে পণ্যের চাহিদাও কমেছে। পরিবেশকরাও সেভাবে আসছেন না। সব মিলিয়ে বাজার কিছুটা ঢিলেতালে চলছে। আটা ও ময়দার দামও আগের মতোই আছে। চিনির দাম কিছুটা কমে কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close