নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

তীব্র তাপপ্রবাহ ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

এপ্রিলের শুরু থেকেই অসহনীয় গরমে পুড়ছে দেশ। যত দিন যাচ্ছে তাপপ্রবাহের এলাকাও প্রসারিত হচ্ছে। এখন দেশের বেশিরভাগ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন। এ অবস্থায় দেশে গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপপ্রবাহ। যা এপ্রিল মাসের দীর্ঘব্যপ্তিকাল বলেছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, ১৯৪৮ সাল থেকে এক বছরে তাপপ্রবাহের দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ বইছে বাংলাদেশে।

এদিকে, চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গতকাল শুক্রবার। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, দুপুর ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১১ শতাংশ আর মেহেরপুরে ছিল ১৪ শতাংশ। এর আগে গেল সপ্তাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয় ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২০ এপ্রিল যশোরে এ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল।

রাজশাহীতে দুপুর ২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া যশোরে ৪০.৮ ডিগ্রি ও মোংলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা অন্তত দুদিন তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তা তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি এপ্রিলে ২৪ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগে ১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগটির তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। এরপর ঢাকা, খুলনা ও রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা বাড়ে এবং দুদিন তা অব্যাহত থাকে।

৮ এপ্রিল কক্সবাজার ও সীতাকুণ্ডে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। ৯ ও ১০ এপ্রিল সারা দেশে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল। ১১ এপ্রিল থেকে উষ্ণতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। আর গরমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে শিশুদের। গত কয়েকদিনে শিশু হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে বেশ।

এদিকে এপ্রিলজুড়ে তাপপ্রবাহ থাকলেও মে মাসের শুরু থেকে গরম কমার সংকেত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, এপ্রিল জুড়েই থাকবে তাপপ্রবাহ। তবে মে মাসের শুরুতেই সারা দেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরপরই গরম কমে আসবে।

আবহাওয়া অফিসের ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিনপটিক অবস্থা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

প্রথম দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রথম দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

দ্বিতীয় দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টিও হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

তৃতীয় দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের শেষের দিকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close