নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ আগস্ট, ২০১৮

বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

রাজধানীর পথে পথে কালো পতাকা। বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে সেই অবিস্মরণীয় ভাষণ, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এর সঙ্গে দেশাত্মবোধক গান অবিরাম বেজেছে সারা দিন। অগণিত মানুষ শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ঢেকে দিয়েছেন তার প্রতিকৃতি। গতকাল বুধবার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এভাবেই অবনত মস্তকে স্মরণ করেছে জাতি।

প্রথমে সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দলের সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানানোর পর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ৩২ নম্বর চত্বর উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানে শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ভিড়ে রাসেল স্কয়ার থেকে কলাবাগান পর্যন্ত রাস্তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে জীবন দেন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘাতকরা রাতের অন্ধকারে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তার স্ত্রী, তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এর আগে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি।

বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছোট বোন শেখ রেহানা ও অন্যদের নিয়ে ফাতেহা পাঠ ও পিতা বঙ্গবন্ধু, মাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করেন।

সেখানে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী শোক দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী, ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, দেশব্যাপী সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে পালিত হয়েছে। ভোরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিসবটি উপলক্ষে আগের দিন মঙ্গলবার রাত থেকেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো হয়। আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পাড়া-মহল্লায় সুস্থদের মধ্যে খাবার বিরতণ করা হয়।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী সিটির নবনির্বাচিত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। কুচক্রী মহল হয়তো জানতো না, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা গেলেও তার আদর্শকে কোনো দিন হত্যা করা যায় না, মুছে ফেলা যায় না। সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শোক র‌্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেনী, মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকারসহ দলীয় নেতারা ছিলেন। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বের করা হয় শোক র‌্যালি। লিটনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে র‌্যালিটি সাহেববাজার, মনিচত্বর হয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সব শহীদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

খুলনা ব্যুরো জানায়, ভোর থেকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী পালন করা হয়। মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করছে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। পাশাপাশি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় মহানগরীর নিউমার্কেট চত্বর হতে শোকর‌্যালি শুরু হয়ে বাংলাদেশ বেতারে গিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, খুলনা সিটির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হেলাল হোসেন প্রমুখ।

আর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সকালে নগর ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ এবং দোয়া মাহফিল হয়।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকালে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা’ শীর্ষক শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সকাল সাড়ে ১০টায় ক্যাম্পাসের ‘বঙ্গবন্ধু চত্বরে’ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা সভা এবং বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল হয়।

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। সকাল সাড়ে ৭টায় নগরের বান্দরোডের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার মো. এনায়েত চৌধুরীসহ জেলা ও মহানগর কমান্ডের নেতারা, বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুজ্জামান, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোশারফ হোসেন, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন দফতরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা। সকাল ৮টায় নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার শহীদদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, শেখ টিপু সুলতান, জেবুন্নেছা আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বরিশাল সিটির নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

পরে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নগরের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। আর বেলা ১১টায় বরিশার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত প্রেস ক্লাবে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল হয়। এ সময় ছিলেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন। দুপুরে বরিশাল সিটি কপোরেশনের উদ্যোগে শিশুদের রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল হয়। এতে রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপন, সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী মজুমদারসহ সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।

এছাড়া নগরের বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসায় মিলাদ মাহফিল, মন্দির-গির্জায় প্রার্থনার অয়োজন করা হয়। অন্য দিকে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।

সিলেট অফিস জানায়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, জেলা ও মহানগর যুবলীগ, জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহানগর ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। এর আগে সকালে জেলা প্রশাসনের শোকর‌্যালি নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close