প্রীতম দাস

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মুক্তমত

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি

বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিকবিষয়ক সংস্থা মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউট বা এমইআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪ সালে বিশ্বের ৪৬টি দেশের মধ্যে শীর্ষ দ্রুত বর্ধনশীল দেশ হবে ভারত, যার জিডিপির হার হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ হবে দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ, যার জিডিপির হার হবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সংস্থার তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে শুধু ভারতের এবং প্রবৃদ্ধির ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া। বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসেবে, ২০২২ সালের শেষে বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৫তম। যা পূর্বের বছর ছিল ৪১তম অবস্থানে। এমইআই-এর বার্ষিক অর্থনৈতিক আউটলুকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হওয়ার কথা বলা হলেও সরকারের লক্ষ্য রয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য পূরণ হলেই বাংলাদেশ হবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ।

স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হতে না হতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে বাংলাদেশে কমেছে দারিদ্র্যের হারও। খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ ৩ বেলা খেতে পারে এবং মোট খানার মাত্র ১১ শতাংশ ভূমিহীন। যা আমাদের জন্য এক বিস্ময়কর সাফল্য। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষ এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে জানে। বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার জিডিপি ২৬,৮৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু অর্থনীতিতে নয়, সামরিক শক্তিতেও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সফলতা একদিন কিংবা দুইদিনে বা একবছরে অথবা দুই বছরে চলে আসেনি । ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তারপর থেকে বছরের পর বছর পার হয়ে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতি ও সর্বোচ্চ পরাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। এইতো সেদিন সেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের কথা, যেদিন পূর্বপাকিস্তানের ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে ও হাজার-হাজার মা-বোনের নির্যাতিত হওয়ার পরে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিজয় অর্জন করেছিলাম। তখন ছিল না এত স্বচ্চল অর্থনৈতিক অবস্থা, ছিল না এত পাকা রাস্তা, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পাকা রাস্তা, বিদ্যালয় এবং বর্তমান বাজেট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকারও বেশি।

বিখ্যাত মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিসি ওয়াটারর এক নিবন্ধে এমিলিয়া ফার্নান্দেজ বলেন, অনেক অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে, যা খুব কম অর্থনীতিবিদই এই ধারণা করতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশ মাত্র দুই দশকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পাকিস্তানের আড়াই গুণ। লন্ডনভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ২০৩৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে। সিইবিআর’র পূর্বাভাস, বাংলাদেশ ২০৩৮ সালের মধ্যে টেবিলে ১৫ ধাপ উপরে উঠে আসবে, বর্তমান অবস্থান ৩৫ তম। আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশ তিন ধাপ এগিয়ে যাবে এবং ২০৩৩ সালের মধ্যে ২৩তম স্থানে উঠে আসবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ক্রমবর্ধমান। ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে বিশ্বমানের নেটওয়ার্ক, সড়কপথ, ৯৯ শতাংশ এলাকায় বিদুৎ, পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এক্সপ্রেসওয়েসহ অত্যাধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ সমভব হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, আর্থ-সামাজিক খাতে উন্নতি করেছে দেশ। তবে, ব্যক্তিগত দুর্নীতিই উন্নয়নের বড় বাধা। আমাদের দেশ বেশ কিছু সূচকেই এগিয়ে আছে। কিন্তু আমাদের ভিতরের দুর্নীতিই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা সবাই যদি আমাদের ভেতরের দুর্নীতি রেখে দেশের জন্য মানবতা নিয়ে কাজ করি, তাহলে আমাদের দেশ দ্রুত থেকেও আরো দ্রুততর এগিয়ে যাবে এবং সামরিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী ও প্রাবন্ধিক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close