reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

তরুণদের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে

বেকারত্বকে আমরা যতই অভিশাপ বলি না কেন, রাতারাতি এই সমস্যা সমাধান আদৌ সম্ভব নয়। আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তাই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেকারত্ব দূরীকরণে কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে, সে ব্যাপারে এখনই ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গতানুগতিক কর্মমুখী, কারিগরি শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব¡রোপ করতে হবে। আশার কথা, সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে গত বছর দেশে বেকারের সংখ্যা কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আগের তুলনায় এক বছরে বেকারত্ব কমছে ০ দশমিক ১৭ শতাংশ।

বিবিএসের বছরওয়ারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে বেকারের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজারে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। বছরওয়ারি হিসাবে, গত বছর শেষে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে ডিসেম্বর শেষে দেশে ৭ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার নারী-পুরুষ জরিপের সময়কালের আগের সাত দিনে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখন কৃষিকাজ করে। ২০৩০ সাল নাগাদ তা কমে ২০ শতাংশ হবে। ফলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া আর বিকল্প নেই। কায়িক শ্রমের বদলে যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষিকাজে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। এখনকার প্রান্তিক কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর ঘটাতে তরুণরা অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। দেশের তরুণদের উৎসাহিত করতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সরকারিভাবে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও কৃষিশিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের জন্য সার, বীজ, যন্ত্রাংশ, কীটনাশক প্রভৃতির বাজার সম্প্রসারণ; হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুপালন, মাছ চাষ, বনায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সর্বোপরি এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে বেকার সমস্যা একক কোনো সমস্যা নয় বরং বহুবিধ সমস্যার জনক। এ সমস্যা ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি সদিচ্ছা যেমন জরুরি, তেমনি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বেরও প্রয়োজন। আমরা আশা করি, বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিক্ষিত ও পরিশ্রমী জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন ধরনের কাজে উৎসাহী করে তুলতে পারলে বেকারত্বের বিশাল বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

বলা বাহুল্য, দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। এ দেশের কর্মসংস্থানেও তারুণ্যের ভূমিকা রয়েছে অসামান্য। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনেও তরুণদের ছিল ইতিবাচক ভূমিকা। আজকের তরুণরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা এবং বড় বড় কাজের নেতৃত্ব দেবে। এখন থেকে যদি তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হবে। তাই দেশ গঠনে তরুণদের চাওয়াকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, ঠিক তেমনি তাদের পর্যাপ্ত সুযোগও দিতে হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close