reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

চিকিৎসা খাতে দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ হোক

বাবা-মায়ের আদরের সন্তান আয়ান আহমেদ। ছোট্ট এ শিশুকে খতনা করানোর জন্য গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। এই ‘সামান্য’ খতনা করাতে গিয়েই তাকে প্রাণ দিতে হলো! এক সময় গ্রামগঞ্জে শিশুদের খতনা করাতো কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকা হাজামরা এবং তা করা হতো অজ্ঞান না করেই। খতনা করানো খুব সহজ কাজ এবং সাধারণ একটি প্রক্রিয়া- সাধারণ মানুষ এমনটিই জেনে আসছে। অথচ খোদ রাজধানীর বুকে তথাকথিত নাম করা এক হাসপাতালের চিকিৎসকরাই সেই খতনা করাতে ব্যর্থ হলেন!

প্রশ্ন হলো, এমন ভুল চিকিৎসা আর কত দিন? অবশ্য ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর খবর এটিই প্রথম নয়। শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তদন্তে উঠে আসে সেই হাসপাতালটির অনুমোদনই ছিল না। এরপর হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। গত সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। মৃত্যুর ঘটনায় আয়ানের বাবার করা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং অভিযুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে, সেটাই সবার কাম্য।

বলা বাহুল্য, চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর এ ধরনের বেদনাদায়ক খবর আমরা প্রায়ই দেখি। যেখানে চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার, সেখানে কিছু হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও ভুল চিকিৎসার কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। এটি মেনে নেওয়া যায় না। এখন বাড়ির পাশে, হাটে-ঘাটে অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেখা যায়। অনুমোদন ছাড়াও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠে অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিক। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবসাটাই যেন এখন মুখ্য হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, এসব দেখার কি কেউ নেই? এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটায় এবং এসব হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় মানুষ তার একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

দেশের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর অন্যতম হলো স্বাস্থ্য খাত। গত বছর ৯ মে হাইকোর্ট বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি রয়েছে। এক রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশে চিকিৎসকরা মুনাফা করছেন।

অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক প্রতিবেদনে বলেছে, স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, কেনাকাটা, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুর্নীতি বেশি হয়। এ অবস্থার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে এ খাতে নতুন মন্ত্রী দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘কখনো দুর্নীতি করিনি, দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেব না। ফলে স্বাস্থ্যের দুর্নীতি প্রতিরোধই হবে নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।’

নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দেশবাসীর মতো আমাদের প্রত্যাশাও থাকবে, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেবেন তিনি। আমরা চাই, দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। যেহেতু চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার, সেহেতু এই খাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close