reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ মে, ২০২২

শ্রমিক সংকটে ফসল উঠছে না ঘরে

কত না সমস্যা মাথায় নিয়ে এ দেশের কৃষককে ফসল ফলাতে হয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলার কথা এখন আর শোনা যায় না। অ্যানালগের দিন শেষ। এখন ডিজিটাল যুগ। অ্যানালগের সময় কৃষকরা যে খুব একটা ভালো ছিল তা নয়। তবে, এতো হা-পিত্তেস করতে দেখা যায়নি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। এদের কারণে কৃষকেদের সবসময়ই ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছে এবং এখনো যা অব্যাহত রয়েছে। এটি বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি ক্রণিক সমস্যা। এছাড়াও রয়েছে সার ও পানির সমস্যা, যা অতিক্রম করা গেলেও নতুন করে শুরু হয়েছে শ্রমিক সংকটজনিত সমস্যা।

শুরু হয়েছে ধান কাটা মৌসুম। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে চলতি বোরো মৌসুমে ১৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সময়মতো ধানে পাক ধরেছে। এখন কৃষকদের উঠানে যাওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ মাঠের ধান এখনো জমিতে পড়ে আছে। আবহাওয়াও ভালো যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের মস্তিষ্কেও ঘুরছে সেই ঝড়ের শঙ্কা। একদিকে ঝড়ের শঙ্কা, পাশাপাশি শ্রমিক সংকট। ধান কাটাতে চলে যাচ্ছে জনপ্রতি একমণ ধান। কেননা একমণ ধানের দাম যখন ৯০০ টাকা, একই সময় একজন শ্রমিককেও দিতে হচ্ছে দিনপ্রতি ৯০০ টাকা। তারপরও দিনমজুর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কে কার আগে ফসল কাটবে চলছে প্রতিযোগিতা। চাহিদার চেয়ে জোগান কম থাকায় এই বিভ্রাট। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। শোনা যায়, দেশ নাকি বেকার জনসংখ্যার ওপরে ভাসছে!

ফলন হয়েছে বাম্পার। স্থানীয় একজন কৃষক সাগর। তিনি বলেছেন, এবার চার একর জমিতে বোরো চাষ করেছেন। ফলনও অনেক ভালো। ধানখেতে গেলে মনটা ভরে যায়। প্রায় সব ধান একসঙ্গে পাকতে শুরু করেছে। শ্রমিকের অভাবে সময়মতো ধান কাটতে পারছেন না। সামান্য কিছু ধান নিজেই কেটেছেন। তিনি বলেছেন, বোরো মৌসুমে খরচ অনেক বেশি। এবার শতকপ্রতি খরচ পড়বে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। অপর একজন বলেছেন, জমিতে ধান পেকে মাথা গুঁজে গেছে। শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছেন না। আকাশে মেঘ দেখলে মনের ওপর চাপ পড়ে। তাই দিশাহারা হয়ে নাঙ্গলকোট বাজার থেকে ৯০০ টাকা করে চারজন শ্রমিক এনেছেন।

এটি কৃষকদের জন্য নতুন এক সমস্যা। সমস্যাটিও নতুন। তাই কোনো কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সমাধানের পথ খোঁজাটাই জরুরি। প্রযুক্তির ব্যবহারই হতে পারে উৎকৃষ্ট পথ। এ ব্যাপরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জলা অঞ্চলের ধান আগেই কাটা হয়েছে। নির্জলা অঞ্চলে বাকি। শ্রমিকের অভাব চোখে পড়ার মতো। শ্রমিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার চালু করা দরকার। এ ব্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এই উদ্বুদ্ধ করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হোক। আগামী মৌসুমে যেন আমরা এই প্রযুক্তির ব্যবহার দেখতে পাই। সে সঙ্গে মনে রাখা জরুরি, কৃষকদের ধানকাটার খরচ যেন বর্তমানের চেয়ে উপরে চলে না যায়। একসময় চা পানে অভ্যস্ত করার জন্য এ দেশে বিনামূল্যে চা পান করানো হয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও তা করতে পারি। মনে রাখা জরুরি, কৃষক বাঁচলে দেশও বাঁচবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close