reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, বেশি খরা এবং অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলন ও ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার কমে যাওয়ায় প্রতি বছরই আশঙ্কাজনকভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। ফলে একদিকে পুকুর-ডোবা, নদ-নদী, খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যেও দেখা দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। আর এতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদও। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ পানিসংকট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

দেশের অনেক নদীর এখন মরণদশা। নদীগুলোর নাব্যতা না থাকার পাশাপাশি পানির স্তর বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ ফিট নেমে গেছে। ফলে হস্তচালিত নলকূপেও উঠছে না পানি। পানি সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা সক্রিয় না থাকায় বিপাকে অনেক এলাকার মানুষ। গতকাল বুধবার প্রতিদিনের সংবাদে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, কুষ্টিয়ায় গড়াই নদী ও খাল-বিলে দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা। টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়ার জনজীবন এখন গরম ও সুপেয় পানির অভাবে জেরবার। পানির অভাবে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কোনো আবাদেই সুফল মিলছে না। তাই কৃষকদেরও দুরবস্থা। খাল-বিল কিংবা নদী-নালায় পানি না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যান্য ফসলও আবাদ করতে পারছেন না পানি ছাড়া। পানির অভাবে কোনো ফসলই উৎপাদন করতে পারছেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গড়াই ও পদ্মা অববাহিকায় ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলন ও ব্যবহারের কারণে এমন নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র পানিসংকটের অন্যতম প্রধান কারণ খাল-বিল, নদী-নালায় পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির যত্রতত্র ব্যবহার। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পানি শুকিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে যেসব নলকূপের লেয়ার কম দেওয়া হয়, সেসব নলকূপে পানি না ওঠারই কথা। শুধু নদী-তীরবর্তী এলাকাই নয়, পুকুর কিংবা খাল-বিল কোথাও পানি নেই। টিউবওয়েলেও পানি উঠছে না। বিকল্প হিসেবে যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তারা সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। কুষ্টিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্ত পদ্মা কিংবা গড়াই নদী এখন প্রায় মৃত অবস্থা। প্রমত্তা-গড়াই পরিণত হয়েছে ছোট খালে। কুষ্টিয়ার পদ্মা কিংবা গড়াই নদীতে পানির নাব্যতা কমেছে। এর প্রভাবে পৌর এলাকাসহ আশপাশের লক্ষাধিক নলকূপে উঠছে না পানি। এমনকি ওই পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নদীর এমন করুণ পরিণতির কারণে এখানকার মানুষের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে, পানির জন্য চলছে হাহাকার। এ অবস্থা শুধু গড়াই নদী নয়, দেশের প্রায় সব নদ-নদী ভুগছে পানিশূন্যতায়। পানির অভাবে অসংখ্য নদী মরে গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে মরূকরণ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে ঘটছে লবণাক্ততার বিস্তার। গ্রীষ্মে পানির অভাব আরো বেশি হয়ে ওঠে। একটি নদীতে যে পরিমাণ পানি ও স্রোতে থাকা প্রয়োজন, তা না থাকায় ভূগর্ভের পানির ওপর চাপ পড়ছে। যেসব নদ-নদী শুকিয়ে গেছে, সেখানে ভূগর্ভে পানি রিচার্জ হওয়ার সুযোগ কম থাকে। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। পুরো এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ে।

ভূ-উপরিস্থ পানি যদি ব্যবহারযোগ্য না থাকে এবং ভূগর্ভের পানি নিচে নেমে যায়, তাহলে কোথায় পানি পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নটি এখন সামনে আসছে। এ অবস্থায় সরকারকে পানিবিশেষজ্ঞদের নিয়ে যথোপযুক্ত ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। কীভাবে নদ-নদীর পানি বিশুদ্ধকরণ এবং ভূগর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমানো যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close