মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

  ০৩ মে, ২০২৪

ধর্মকথা

পবিত্র ওমরাহ আদায় করার নিয়ম

ওমরাহ আদায় করা মুমিন নারী-পুরুষদের জীবনের সুপ্ত বাসনা। জিলহজ মাসের ৮-১২ তারিখ হচ্ছে পবিত্র হজের নির্দিষ্ট সময়। এ সময়ের বাইরে হজ করা যায় না। আর ওমরাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। শুধু হজের দিনগুলো ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোতে ওমরাহ করা যায়। বিশেষ করে রমজানের সময় ওমরাহর ফজিলত অনেক বেশি। তার পরও বিশ্বের মুমিন মুসলিম হজের জন্য বাইতুল্লায় আগে আগে গেলে হজের আগে ওমরাহ করে থাকেন। আবার অনেকে হজ ও ওমরাহর ইহরাম একসঙ্গে বেঁধে উল্লিখিত সময়ের আগেই ওমরাহ আদায় করেন এবং সেই ইহরাম দিয়ে পবিত্র হজও সম্পাদন করেন। এখানে ওমরাহর ফজিলত ও ওমরাহ করার নিয়ম তুলে ধরা হলো।

ওমরাহর ফজিলত : হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরাহ আরেক ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের ক্ষতিপূরণ। আর মাবরুর হজের (কবুল হজের) প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (বোখারি : ১৭৭৩)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরাকারীরা যখন দোয়া করে, তাদের দোয়া কবুল করা হয়। তারা যখন কারো জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাদের ক্ষমা করা হয়।’ (ইবনে মাজাহ : ২৮৯২)

ইহরাম বাঁধা ফরজ : পুরুষরা ইহরামের জন্য প্রস্তুতকৃত সাদা দুটি কাপড় ও মহিলারা তাদের সাধারণ পোশাক পরে মিকাত ছেড়ে যাওয়ার সময় নিয়তের সঙ্গে বলবেন, ‘লাব্বাইকা ওমরাতান’ ওমরাহ যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তাহলে অন্তরের নিয়তের সঙ্গে ‘লাব্বাইকা ওমরাতান আন’-এর পরে তার নাম উচ্চারণ করতে হবে। পবিত্র কাবা ঘর দেখার আগ পর্যন্ত তালবিয়া ও অন্য সব ধরনের দোয়া পড়তে হবে। তালবিয়া হলো ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।’

ইহরামের নিয়ত করার পর যা নিষিদ্ধ : ১. পুরুষের জন্য সেলাই করা পোশাক পরা; ২. মাথার সঙ্গে লেগে থাকে এমন জিনিস দ্বারা মাথা ঢাকা। (তবে মহিলারা মাথা ঢেকে রাখবেন); ৩. ইচ্ছাকৃতভাবে মাথার চুল ও শরীরের পশম কাটা বা ওঠানো; ৪. হাত-পায়ের নখ কাটা; ৫. আতর বা সুগন্ধি জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা; ৬. স্থলচর প্রাণী শিকার করা; ৭. স্বামী-স্ত্রী মিলন করা বা এ জাতীয় বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা; ৮. বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া বা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া; ৯. মহিলাদের জন্য হাত মোজা ব্যবহার করা এবং মুখ ঢাকা; ১০. পবিত্র মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানার গাছ-গাছালি কাটা, ভাঙা, উপড়ানো; ১১. পবিত্র মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানায় পড়ে থাকা জিনিস নেওয়া। তবে তা মালিককে দেওয়ার জন্য ওঠানো যাবে। (মুকাম্মাল মুদাল্লাল হজ ও ওমরাহ : ১২০)

পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর করণীয় : ২. তাওয়াফ করা ফরজ : পবিত্র মক্কায় পৌঁছে তওয়াফে যাওয়ার আগে অজু করে নিতে হবে। কেননা তওয়াফের জন্য অজু শর্ত। নামাজের সময় নিকটবর্তী না হলে, মসজিদে হারামে প্রবেশ করে সরাসরি তওয়াফে যেতে হবে। তওয়াফ শুরুর আগে পুরুষদের জন্য ইজতেবা করতে হবে। অর্থাৎ চাদরের মধ্যভাগ ডান কাঁধের নিচে দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের ওপর রাখতে হবে। ‘বিসমিল্লাহ আলাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদ চুমো বা স্পর্শ করার মাধ্যমে তওয়াফ শুরু করতে হবে। চুমা বা স্পর্শ করার সুযোগ না হলে হাজরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে শুধু ডান হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ইশারা করে চুমু দিয়ে তওয়াফ শুরু করতে হবে। হাজরে আসওয়াদের আগের কোনো রুকনে ইয়ামানিতে পৌঁছা পর্যন্ত সময়ে, কোরআন তিলাওয়াত, দুরুদ শরিফ ও যেকোনো ধরনের দোয়া পড়া যায়। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে এলে এক তওয়াফ হয়। এভাবে সাত তওয়াফ বা চক্কর শেষ করে উভয় কাঁধ ঢেকে, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ পড়ার উপযুক্ত স্থান পেলে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। ভিড়ের কারণে সম্ভব না হলে কাবা শরিফের যেকোনো স্থানে পড়লেই চলবে।

৩. সায়ী করা ওয়াজিব : এখন সায়ী করার জন্য সাফা-মারওয়া পাহাড়ে যেতে হবে। শুধু সাফাতে আরোহণের সময় এ আয়াত ‘ইন্নাছ সফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআ ইরিল্লাহ’ পড়তে হবে। পাহাড়ে আরোহণ করে কিবলামুখী হয়ে, দোয়ার জন্য দুই হাত তুলে তিনবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’ বলে এই দোয়াটি পড়তে হবে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহ্দাহু।’ মাঝে মাঝে অন্যান্য দোয়াও পড়া যাবে।

এখন মারওয়ার দিকে যেতে হবে। কিছুদূর গেলে দুটি সবুজ চিহ্ন দেখা যাবে। দুই চিহ্নের মাঝে শুধু পুরুষদের হালকা দৌড়াতে হবে। সাফা-মারওয়াতে চলতে, কোরআন তিলাওয়াত, দুরুদ শরিফ, তাসবিহ ও যেকোনো ধরনের দোয়া পড়া যায়। (শরহে বোকায়া, হজ অধ্যায়)

৪. মাথার চুল খাটো করা বা মুণ্ডানো ওয়াজিব : সাফা মারওয়াতে সায়ী শেষে মাথার চুল চারভাগের একভাগ ছোট বা মুণ্ডন করা উভয়টিই বৈধ। তবে মুণ্ডন করাই উত্তম। কেননা মুণ্ডননকারীর জন্য প্রিয়নবী (সা.) তিনবার দোয়া করেছেন। আর মহিলারা মাথার চুলের মাথা থেকে আঙুলের এক গিরা পরিমাণ ছোট করবেন। এখন আপনার ওমরা হয়ে গেল।

আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উসিলায় আমাদের সবাইকে পবিত্র হজ ও ওমরাহ আদায় করার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : আরবি প্রভাষক, আউশপাড়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা

খতিব, বাইতুল আশরাফ জামে মসজিদ, মিরপুর-০২, ঢাকা

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close