আজহার মাহমুদ

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

দৃষ্টিপাত

বিপদে এগিয়ে যাওয়াই জরুরি

মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টি সেরা জীব, সব শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষকে। কিন্তু সব শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েও মানুষ চিরস্থায়ী নয় এই সুন্দর পৃথিবীতে। পৃথিবীতে ক্ষণিকের অবস্থান মানুষের। যেন ভ্রমণ করতে আসা একটি উন্নত প্রাণীবিশেষ। আর এই ভ্রমণের পরিসমাপ্তি হবে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। অথচ এই সহজ-সরল সত্যকে আমরা সহজভাবে নিতে শিখিনি।

আমরা আজ হিংসা, অহংকার আর স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সত্যি বলতে আমাদের এখন আমরা বিষয়টা নেই। আমরা এখন প্রত্যেকেই আমিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। কেউ কষ্ট পাচ্ছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, কেউবা রাস্তায় পড়ে আছে মুমূর্ষু অবস্থায়। কিন্তু এতে আমার-আপনার কি! হ্যাঁ আমাদের এখন এই টেন্ডেন্সি কাজ করে। এটা সত্যি, একদম পবিত্র কোরআনের বাণীর মতো সত্য না হলেও আমাদের দুচোখে দেখা বাস্তব দৃশ্য। আমরা পথে কেউ অ্যাক্সিডেন্ট করলে এগিয়ে যাই না, পালিয়ে যাই। কেউ কাউকে কুপিয়ে মারলে আমরা এগিয়ে যাই না, পালিয়ে যাই। তবে হ্যাঁ, পালিয়ে না গিয়ে একটা মহৎ কাজ করে থাকি। সেটা হচ্ছে লোকটার অসহায়ত্ব ভিডিও করা অথবা নিজের দুচোখ দিয়ে উপভোগ করা। আমরা সিনেমা, নাটক, টেলিফিল্ম দেখতে দেখতে আসলেই এখন বিভোর। তাই এখন আমরা বাস্তবে এমন কিছু দেখতে উৎসাহী। ভাবছেন এমনটা সত্য নয়। এটা আমার নিজের কথা। তাহলে ওই যে বনানীতে আগুন লাগার দৃশ্য! সেই কথা কি মনে আছে? অসহায় মানুষ পাগলের মতো করছে। অথচ অথচ আমরা নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে দেখেছি। শুধু দেখেছি বললে ভুল হবে, আমরা ভিডিও করেছি। উফফ, এটাও কম হয়ে গেল। আমরা ভিডিও করে সেটা আবার ফেসবুকেও দিয়েছি। এতে অনেক অনেক লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট হয়েছে। দিন শেষে আপনি-আমি নায়ক বনে গিয়ে আত্মতৃপ্তির ডেকুর তুললাম।

হ্যাঁ, এ রকম ফেসবুকের নায়ক সমাজে অহরহ হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে মানুষের উপকার করে, মানুষের কষ্ট দেখলে এগিয়ে গিয়ে কষ্ট দূর করাÑ এদের সংখ্যা খুবই কম। এরা সংখ্যালঘুদের চেয়েও সংখ্যালঘু। আজ আমরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে পছন্দ করি। এই স্বভাবটা কখন থেকে আমাদের প্রথা হিসেবে দাঁড়িয়েছে সেটা সম্ভবত কারো জানা নেই। তবে আমরা নিত্যদিন এমন দৃশ্য দেখতে পাই, যেখানে মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে অন্যের কষ্টের দৃশ্য দেখছে।

এই তো সেদিনের ঘটনা, অফিসে যাচ্ছিলাম সিএনজিতে বসে। চট্টগ্রামের ঝাউতলা রেলগেট পার হয়ে যাচ্ছি এমন সময় রাস্তায় দেখি মানুষ জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অবশ্য দাঁড়াতে পারিনি। কারণ গাড়ির ড্রাইভার চলছে তার আপন গতিতে। থামতে বলার পরও থামেনি। খবর নিয়ে জানলাম, সেই স্থানে এক মোটরসাইকেল আরোহী অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। মানুষ তাকেই গোল হয়ে দেখছে। হাসপাতালে নেওয়ার কথা ভাবছে না। অপেক্ষায় আছে কখন পুলিশ আসবে। পুরোটাই দায় এড়ানোর মানসিকতা। এ রকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে। খুব কম পাওয়া যাবে মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো সেসব মানুষকে। এটাই বর্তমান সমাজচিত্র।

আমাদের ভেতর এখন না আছে মানবতা, না আছে মনুষ্যত্ব। আমরা বাইরে শুধু মানুষের রূপ নিয়ে চলছি। কেন জানি মানবতা আর মনুষ্যত্ব শব্দগুলোর জন্য মায়া হয়। বোধহয় এই শব্দ দুটোও রোজ আফসোস করে। কারণ এদের এখন সবাই অবহেলা করে। আমরা এখন নিজের জন্যই বোধটাকে বাঁচিয়ে রেখেছি। অন্যের জন্য যা মৃত।

কিন্তু এভাবে আর কত? মানুষ তো মানুষের জন্য। আপনি অন্যের জন্য মানবতা, মনুষ্যত্ব না দেখালে আপনার জন্যও কেউ দেখাবে এমনটা আশা করতেই পারেন না। আর সে কারণেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নেতিবাচক এই স্বভাবটা মুছে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে মানুষের বিপদে। শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, অন্যের চিন্তাও করতে হবে। যে অন্যের জন্য চিন্তা করবে, তার চিন্তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও করবেন। তাই আসুন মানুষের পাশে দাঁড়াই। মানুষকে সহযোগিতা করি। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার স্বভাব বন্ধ করি।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close