reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর, ২০২০

মুক্তমত

অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম ও ফল

ইকবাল হাসান

করোনার জন্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটেছে। উন্নত দেশগুলো এই ক্ষতি অনলাইনের মাধ্যমে পুষিয়ে নিলেও অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো পড়েছে বিপাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্ঞান এবং অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না শিক্ষকরা।

অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা আমাদের দেশে একেবারেই নতুন। করোনা না এলে হয়তো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কথা আরো পরে ভাবা হতো। কিন্তু হঠাৎ এই পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়ার ফলে অনেক শিক্ষকরাই কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। এই দুই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অ্যাপসের ব্যবহার করছে অথবা ইউটিউবে ভিডিও আকারে লেকচারগুলো দিয়ে দিচ্ছে। এতে ক্লাসরুমে ক্লাস নেওয়ার অনুভূতির বিন্দুমাত্র পাওয়া না গেলেও বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। যখন জুম অ্যাপস বা অন্য অ্যাপসে যখন ক্লাস নেওয়া হয়, তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নিজেদের ভাব আদান-প্রদানের একটি পরিবেশ থাকে। এই পদ্ধতি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করলেও কিছু কলেজ শুরু থেকেই ইউটিউবে লেকচারগুলো দিয়ে আসছিল। এতে দেখা যায়, শিক্ষকরা একা একা একটি মোবাইল ফোনের সামনে বসে ক্লাস নিচ্ছেন, নিজের মতো করে বুঝিয়ে যাচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ থাকছে না। এতে শিক্ষার্থীরা কিছু বুঝে উঠতে পারেন না আবার শিক্ষকরাও ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারেন না।

এ সমস্যার সমাধানের জন্য কিছু কলেজ জুম অ্যাপসে ফিরে এলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কারণ যখন প্রতিষ্ঠান থেকে ইউটিউবে ভিডিও দেওয়া হতো, তখন একটা বিষয়ের যত শিক্ষক আছে তারা সকলে আলাদা আলাদা অধ্যায়ে ভিডিও বানিয়ে একই দিনে দিয়ে দিত। এতে শিক্ষকদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের জন্য সেটা হতো শিক্ষার বোঝা! তাই এখন জুম অ্যাপসে ক্লাস নিয়েও আশানুরূপ ফল আসছে না। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিকে অনলাইনে ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়ার ঘটনা লক্ষ করা গেছে। এতে অনলাইনে শুধু শিক্ষক দেখিয়ে যাচ্ছেন, শিক্ষার্থী শুধু খাতায় উঠিয়ে যাচ্ছে! ব্যবহারিক শিক্ষার যে মূল বিষয়; হাতে কলমে শেখানো সেটা হচ্ছে না। এতে সামনের দিনে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ারে কিংবা শিক্ষাগত জীবনে কতটা দক্ষ হতে পারবে; সেই নিয়েও সন্দেহ থেকে যাচ্ছে! ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিছু কলেজ এই করোনার জন্য তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে লাভ করার কোনো পন্থাতেই ছাড় দেয়নি। শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার নাম করে লুটে যাচ্ছে অভিভাবকদের টাকা। নামমাত্র অনলাইন ক্লাসের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে।

উচ্চমাধ্যমিকের সমস্যার কথা শেষ হলেও এখনো বাকি আছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা। করোনার কারণে দেশে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেটাই ভুলতে বসেছে অনেকে। অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বয়স চলে যাচ্ছে কিন্তু অনার্স আর পাস করা হলো না। এখনো তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাস! প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়েই অনলাইন ক্লাস ভালোমতো হচ্ছে এবং সেটা শিক্ষকদের সহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণেই শুধু সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে গেছে নৈশ বিদ্যালয়! সেগুলো আর বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তার কারণ বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষক ক্লাস নেন রাতের দিকে। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে আগে সন্ধ্যাকালীন স্নাতকোত্তর ক্লাস করাতেন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাসের সময়ে অথবা কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যেতেন ক্লাস নিতে। এই বন্ধেও সেটাই হচ্ছে। যে সময়টা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দেওয়ার কথা ছিল, সেটা দিচ্ছেন কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে আর নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সময় দিচ্ছেন রাতে। এতে করে শিক্ষার্থীদের ঝামেলা বাড়ছে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা।

সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি অনলাইন ক্লাস ভালোভাবেই চলছে, কিন্তু গুটিকয়েক শিক্ষকের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাই সবার কথা চিন্তা করে ক্লাসের সময়সূচি নির্ধারণ করলে সবাই অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন কলেজে যে ব্যবহারিক শিক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বন্ধ করা জরুরি। কারণ এ রকম দায়সারাভাবে শুধু দায়িত্ব পালন করে গেলে শিক্ষার্থীরা কিছু শিখতে পারবেন না। শিক্ষাবর্ষের সময় বৃদ্ধি করা হোক, চাকরিতে প্রবেশের সময় বৃদ্ধি করা হোক। না হলে এ রকম অটোপাস এবং অনলাইন ব্যবহারিক ক্লাস চলতে থাকলে বর্তমান প্রজন্ম নিয়ে এই বাংলাদেশ কী করবে, ভেবে দেখতে হবে। ১৯৭২ সালেও অটোপাসের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রয়াত আনিসুজ্জামান স্যার তার ভাবনা ‘বিপুলা পৃথিবী’তে উল্লেখ করেছেন। করোনার জন্য পরীক্ষা নেওয়ার দাবি করা যায় না কিন্তু করোনা শেষ হলে একই জায়গা থেকে শিক্ষাবর্ষ শুরু করা যায়। আর যেসব শিক্ষার্থী শেষবর্ষে আছে, তাদের সংখ্যা তো কম তাই তাদের না হয় পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে কিংবা চাকরিতে প্রবেশের সময়ও বাড়ানো যায়। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার প্রশ্নে দায়সারা দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তা পূরণ হয় না। এখানে আরো বেশি কিছু যোগ করতে হয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close