ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ২৩ মে, ২০১৮

পর্যালোচনা

মাদকের অনুপ্রবেশ এবং...

মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। গত দুই সপ্তাহে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে অন্তত ২০ মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। আটকের সংখ্যা হাজারখানেক। মাদক দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই এমনকি হত্যাকা-ের যে ঘটনা ঘটছে, তার সিংহভাগের সঙ্গে মাদকের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে।

মাদকবিরোধী তৎপরতায় কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জিত না হওয়ায় ৩ মে ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব যেভাবে অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে, এখন মাদকের বিরুদ্ধেও সেভাবে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এ আহ্বানের কয়েকদিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজনকে নিয়মিত মামলা ও বাকিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে জেল দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মাদক দমনে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেওয়ায় তা অপরাধীদের মনে ভয় ঢোকাতে সক্ষম হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংসদ সদস্যসহ সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির একটি ক্ষুদ্র অংশের লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। মাদকের অভিশাপ থেকে দেশের যুবসমাজকে বাঁচাতে অসৎ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চললেও এর আগ্রাসন থেমে নেই। ইয়াবা মস্তিষ্ককে চরমভাবে উদ্দীপ্ত করে। সেবন করলে তাৎক্ষণিক হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কিছু কোষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে। এ মাদক সেবনে দুর্বল ব্যক্তিদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সহিংস যৌনতাও ইয়াবা সেবনের একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যদিও এক বছর নিয়মিত এ বড়ি সেবন করলে যৌনক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি মাসে দেশে অন্তত ১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটক হয়। এ মাদক নেশার আগ্রাসন কতটা যে বিস্তৃত এ পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ। যুবসমাজকে এর আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে মাদকবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা দরকার। একই সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।

মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝেমধ্যে ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও তাদের মূল কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। যারা ইতোমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়েছে, তাদেরও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়াতে হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে।

এখন সরকারি হিসাবেই দিনে সেবন হয় ২০ লাখ ইয়াবা বড়ি। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে স্রোতের মতো ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। যেখানে ২০১০ সালে ৮১ হাজার ইয়াবা বড়ি আটক হয়েছিল, সেখানে ২০১৬ সালে আটকের সংখ্যা দাঁড়ায় তিন কোটি। মিয়ানমারের বিদ্রোহী ও কিছু অপরাধী গোষ্ঠী ইয়াবা বিস্তারের প্রধান রুট করেছে বাংলাদেশকে। তিন কোটি ইয়াবা আটক হলে বছরে কত কোটি ইয়াবা আসে বাংলাদেশে? ধারণা করা হয়, বছরে কেবল বাংলাদেশে বিক্রীত ইয়াবার দাম আসে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এক দিনেই মিয়ানমার বিক্রি করছে ৬০ কোটি টাকার ইয়াবা।

আমরা মনে করি, দেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে মাদক নির্মূল করতে হলে নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনার কোনো বিকল্প নেই। মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন জরুরি। সেই সঙ্গে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্যও অভিযান জোরদার কার্যক্রম প্রয়োজন।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist