ফারহানা আফসার মৌরী পড়াশোনা করছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ঝুড়িতে আছে অনেক অর্জন। বিভিন্ন সংগঠনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পাশাপাশি কাজ করছেন বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে। সম্প্রতি তিনি জিতেছেন ইন্সপায়ারিং ওম্যান অ্যাওয়ার্ড। তার এ অর্জনের গল্প শোনাচ্ছেন মোস্তফা কামাল

‘ছোট থেকে আর্টের প্রতি একটা ঝোঁক ছিল। আর্ট বলতে আমি টাইপোগ্রাফি করতে বেশি পছন্দ করি। করোনাতে অলস সময় পার করছিলাম। লকডাউনে কোনো অ্যাকাডেমিক প্রেশার ছিল না। তখন থেকেই টাইপোগ্রাফি করা শুরু করি। তারপর ইকো ব্যানারও বানিয়েছি কয়েকটা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের পাশে যাত্রীছাউনিতে আর্ট করেছিলাম। বন্ধ-বান্ধব, সহপাঠীরা আমার টাইপোগ্রাফির প্রশংসা করে এবং অনুপ্রেরণা দেয় সব সময়। সবচেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি গ্রিন ব্যানার তৈরি করে। চটার ওপরে রংতুলি দিয়ে আমার তৈরি করা ব্যানারগুলো বিভিন্ন প্রোগ্রামে ব্যবহৃত হয়েছে।’

কথাগুলো বলেন ইন্সপায়ারিং ওম্যান অ্যাওয়ার্ড ফারহানা আফসার মৌরী। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেই প্রতিষ্ঠান যেখানে মানবতাবাদ, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা, সত্যানুসন্ধান, নতুন নতুন জ্ঞান অন্বেষণ, গবেষণা, দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, ইচ্ছা ও বুদ্ধির মুক্তচর্চা সদগুণ এবং মানবজাতির সার্বিক কল্যাণের শিক্ষা দেওয়া হয়। প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শিক্ষার্থীদের বৃহৎ একটি অংশ যুক্ত আছে এমন বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনগুলো আমার প্রাণ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ক্লাব, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ইউনিভার্সিটি অব বরিশাল জিওফিজিক্যাল সোসাইটি- এই তিনটা ক্লাবে আমি টানা দুই বছর এক্সিকিউটিভ বডিতে কাজ করছি। সংগঠনগুলোতে কাজ করা শুরু হয়েছিল অফিস সহকারী, কোষাধ্যক্ষ এবং পাবলিকেশন সেক্রেটারি পদ দিয়ে। বর্তমানে সায়েন্স ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ, তরুণ কলামের সাধারণ সম্পাদক এবং ইউবিজিএসেএর অর্গানাইজিং সেক্রেটারি হিসেবে আছি। এই সংগঠনগুলো করতে গিয়ে অনেক জুনিয়র এবং সিনিয়রের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। সিনিয়রের থেকে শিখেছি আর জুনিয়রদের এখনো কীভাবে ক্লাব চালাতে হয় এগুলো নেতৃত্ব দিয়ে শিখাচ্ছি।

মৌরী বলেন, একজন শিক্ষার্থীর অর্জিত ডিগ্রি ও ভালো সিজিপিএ ক্যাম্পাস পরবর্তী জীবনে ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করবে। তবে ক্লাস রুমের বাইরে অর্জিত জ্ঞান একজন শিক্ষার্থীকে সারা জীবন চলার পথে রসদ জোগায়। তাই বর্তমান তুমুল প্রতিযোগিতার যুগে ভালো ক্যারিয়ার গঠনে পড়াশোনার পাশাপাশি কো-কারিকুলামের অ্যাকটিভিটিসের বিকল্প নেই।

অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শুধুই পাঠ্যবইয়ের মলাটে আর ইট-পাথরে ঘেরা চার দেয়ালের ক্লাস রুমে আবদ্ধ না করে ক্লাসের বাইরের জগৎ থেকেও নানা অভিজ্ঞতা আর শিক্ষা নিয়ে জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজাতে হবে।

স্বে^চ্ছাসেবী সংগঠনে একজন তরুণ নিজেকে বিকাশের সুযোগ পান। এখানে নেতৃত্বের গুণাবলির চর্চা হয়, পাশাপাশি শেখানো হয় লেখালেখির কৌশল, সাংস্কৃতিক আড্ডা, উপস্থাপনার কৌশল ইত্যাদি। তাই বর্তমানে চাকরির বাজারে নিজেকে দক্ষ কর্মী হিসেবে প্রমাণ করতে চাইলে অবশ্যই ছাত্রজীবনে কোনো না কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হবে সবার চেয়ে।

ইন্সপায়ারিং ওম্যান অ্যাওয়ার্ড, লিডার্স অফ টুমরো ক্যাটাগরিতে পাওয়া এ পদকটির পেছনে কো-কারিকুলামের অবদান সবচেয়ে বেশি। অ্যাওয়ার্ড টি পাওয়ার জন্য প্রথমে নমিনেশন পেতে হয়েছে। নমিনেশনের জন্য আমার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা সম্পর্কে একটা প্রেজেন্টেশন ফাইল সাবমিট করতে হয়েছে।

৯ মার্চ, ২০২৪ ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে উইলফেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাওয়ার্ড টি পেয়ে আমি খুবই খুশি।

তিনি ইউনিসেফ কর্তৃক এক লাখ টাকার একটি সিডফান্ড জিতেছেন। ইমাজিন ভ্যাঞ্চ্যুরস ইয়ুথ চ্যালেঞ্জ ২০২৩ নামক বুটক্যাম্পে জিতে কাজ করছেন সমুদ্র উপকূলবর্তী মানুষের লবণাক্ত খাবার পানি নিয়ে। পাশাপাশি তিনি সুইডিশ গভ. থেকে ৫ লাখ টাকার একটি প্রজেক্টেও ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া তিনি ২০১৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন কয়েকবার। ঝুলিতে রয়েছে বিটিভিতে বিতর্ক করার সনদপত্রও। সংগঠনগুলো থেকে তিনি ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তা ছাড়াও খেলাধুলা থেকে শুরু রোভার স্কাউট অঙ্গনেও তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।

ভবিষ্যতে আপনার পরিকল্পনা কী? জবাবে মৌরী বলেন, আমার দায়িত্ব এখন আরো বেড়ে গেছে। আমি আমার মতোই অসংখ্য লিডার তৈরি করতে চাই। তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার উৎস হতে চাই এবং এক দিন সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে চাই।

"