মো. নেছার উদ্দিন চৌধুরী, রাবি

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

সাহিত্যের রূপ-লাবণ্যে ঘেরা বর্ণিল দিন

প্রতিটি জাতির নিজস্ব একটি ভাষা আছে এবং প্রত্যেক ভাষার একটি সাহিত্য জগৎ আছে। আর এ জগৎটাই সেই ভাষাকে সুন্দর ও সাবলীল রূপ দান করে অন্য ভাষাভাষী জাতির কাছে উপস্থাপন করে নিজেদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আরবি ভাষার ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। এ ভাষা যেমন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও জীবন্ত ভাষা। তেমনি এর সাহিত্যকর্ম ও শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থানে ১ম সারিতে অনড়। যুগশ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম ও সাহিত্যিক এ আরবি ভাষারই ফসল। পৃথিবীর অধিকাংশ সাহিত্যই এ আরবি সাহিত্যের নকলকৃত রূপ। সাহিত্যর রূপ-লাবণ্য বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ১৯২১ সালে সর্বপ্রথম আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৯১ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃত চর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

এ সাহিত্যের প্রাঞ্জলতা, উদারতা ও সাবলীলতা বাঙালিকে উপলব্ধি করানোর জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাঝে মাঝেই নানা বর্ণিল আয়োজন করে থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০-১২-২০২৩, দিনটি ছিল এ রকম সাহিত্যের রূপ-লাবণ্যে ঘেরা বর্ণিল একটি দিন। ওইদিন ক্যাম্পাসে শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসির সামনে আয়োজিত হয় ‘বার্ষিক প্রীতিভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’। কী ছিল না সেই অনুষ্ঠানে? সাহিত্যের মূল্যবান সব শাখার বাস্তবিক রূপ দান করা হয়েছিল প্রত্যেকটা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বেলা ২টায় মধ্যাহ্নভোজের পর থেকেই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে এ প্রোগ্রামের সূচনা হয়। তারপর হামদ্-নাত। এরপরই আরবি বিভাগের শিক্ষক মহোদয়দের বক্তব্য। প্রথমে এ বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. আতোয়ার রহমানর। তিনি অনুষ্ঠানের সুন্দর সমাপ্তির প্রত্যাশা এবং আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান। এরপর ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য রাখেন বিভাগের অন্য শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ড. কামারুজ্জামান, ড. আবু সালেহ মোহাম্মদ ত্বহা, ড. সালেকুজ্জামান, ড. নেছার উদ্দিন, ড. মতিউর রহমান, ড. সেতাউর রহমান ও ড. মতিউর রহমান-২-সহ অনেকে।

তারপরই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয় ছোট্ট একটি নাটিকা ‘আজব ভাইভার’ মধ্য দিয়ে। এতে অভিনয় করেন ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহদী হাসান ও নেছার উদ্দিন চৌধুরী। চলতে থাকে নাটক পর্বের আরো একটি পরিবেশনা ‘লাশ বিড়ম্বনা’। এতে অভিনয় করেন ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান, জাহিদ হাসান, জিহাদ ও ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম ও ইমরান। পরবর্তী পর্বে ছিল রম্য বিতর্ক ‘ফলের রাজ্যে আমি সেরা’। আম, কাঁঠাল, তরমুজ ও কলাই ছিল সেরা হওয়ার কচকচানিতে। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো বাউল গান। এই গান মঞ্চায়ন করেন আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতি রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা’ সংগঠনের শিল্পীরা। সবচেয়ে ঝমকালো আয়োজন ছিল এরাবিয়ান স্টাইলের র‌্যাম্প শো অনুষ্ঠানটি। যেটি পুরো অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হিসেবে কাজ করেছে। পাশাপাশি ছিল নাচের একটি অংশ, যা অনুষ্ঠানেকে প্রাণবন্ত করেছে। পুরো অনুষ্ঠানের নজরকারা এক পরিবেশনা ছিল চেয়ারম্যান স্যারের কণ্ঠে গাওয়া ‘আমায় এত দুঃখ দিলি বন্ধুরে বন্ধু’ শীর্ষক ফোক গানটি। মনে হচ্ছিল যেন গীতিকার জালাল উদ্দীন খাঁ স্বয়ং এ গানটি পরিবেশন করছেন। অনুষ্ঠানের সবশেষে ছিল অনুভূতিমূলক বক্তব্য। যেখানে ড. ইফতেখারুল আলম মাসুদ এরাবিক ক্লাব তৈরির ইঙ্গিত দেন। যেখান থেকে আরবি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা আরো জোরালো হবে। এ সময় বক্তৃতায় ড. মনিরুজ্জামান আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীদের লুকিয়ে থাকা প্রতিভাগুলোকে বিকশিত করতে এবং সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা করতে এ রকম আরো অনুষ্ঠান আয়োজনের পরামর্শ দেন।

সবশেষে, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিরুল ইসলাম হাওলাদার নিজের বক্তৃতায় আরবি বিভাগকে মানুষ যেন দোয়া ও মোনাজাত বিভাগ মনে না করে। বরং সংস্কৃতির বিকাশে এদের অবদান স্বীকার করে সবার উদ্দেশ্যে এই বার্তা দেন। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল্লাহ নীল। অনুষ্ঠানটি আরবি বিভাগের হলেও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও ছিল বেশ ভারী। রাত ৯টার দিকে অনুষ্ঠানের কার্যাদি সমাপ্তি হয়। স্মৃতির পাতায় অমর হয়ে থাকবে সাহিত্যের রূপ লাবণ্যে ঘেরা বর্ণিল দিনটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close