সুরঞ্জন ঘোষ

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন

বিট্রিশ ভারত বিভক্ত হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যেসব রাজনৈতিক আন্দোলন করেছিল, সেসবের মধ্যে ভাষা আন্দোলনই ছিল সবচেয়ে ব্যাপক, তীব্র ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার জনগণের পৃথক অস্তিত্বের চেতনা তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রকাশ ঘটে। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থিত হতে দেখা যায়। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একটি প্রবন্ধে বলেন, ‘যদি বিদেশি ভাষা বলিয়া ইংরেজি ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোনো যুক্তি নাই। যদি বাংলা ভাষার অতিরিক্ত কোনো রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করিতে হয়, তবে উর্দু ভাষার দাবি বিবেচনা করা কর্তব্য।’

শুধু সাংস্কৃতিক মহলই নয়, রাজনৈতিক মহলেও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে ভাষাবিষয়ক কিছু উল্লেখযোগ্য চিন্তাভাবনা ছিল। ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম প্রাদেশিক পরিষদে পেশ করার জন্য যে খসড়া ম্যানিফেস্টো প্রণয়ন করেছিলেন, তাতে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের ৩ জুন ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ গভর্নর জেনারেল মাউন্ট ব্যাটেন কর্তৃক ভারত বিভাগ সম্পর্কিত রোয়েদাদ ঘোষণার পর মুসলিম লীগের অল্পসংখ্যক বামপন্থি কর্মীর উদ্যোগে জুলাই মাসে ঢাকায় ‘গণআজাদী লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক গ্রুপ গঠিত হয়। কামরুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তেয়াহা, তাজউদ্দীন আহমদ, অলি আহাদ প্রমুখ নেতৃস্থানীয় কর্মীর দ্বারা এটি গঠিত হয়। এই গ্রুপের দাবি কর্মসূচি আদর্শ নামে যে ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করে তাতে বলা হয় : মাতৃভাষার সাহায্যে শিক্ষাদান করিতে হইবে। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষাকে দেশে যথোপযোগী করিবার জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করিতে হইবে। বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা।

গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলা ভাষাবিষয়ক প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে লিয়াকত আলী খান, নাজিমুুদ্দিন, তমিজুদ্দিন খান প্রমুখ মুসলিম লীগ নেতা যেসব বক্তব্য প্রদান করেন তার বিরুদ্ধে পত্রপত্রিকার বিরোধিতাই নয়, ছাত্র ধর্মঘট, মিটিং-মিছিল ইত্যাদির মাধ্যমেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং স্কুল ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বর্জনের পর মিছিল করে বাংলা ভাষার সমর্থনে নানা স্লোগান দিতে দিতে রমনা এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এরপর মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হলে সেখানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় আবুল কাসেম সভাপতিত্ব করেন এবং বক্তৃতা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দিন আহমদ ও ফজলুল হক হল ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি মোহাম্মদ তোয়াহা।

গণ পরিষদের সিদ্ধান্ত এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগের বাংলা ভাষাবিরোধী নীতি ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমদ্দুন মজলিসের যৌথ উদ্যোগে ফজলুল হক হলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের একটি সভা আহ্বান করা হয়। এই সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশ নেন তাদের মধ্যে কামরুদ্দীন আহমদ, রণেশ দাশগুপ্ত , আজিজ আহমদ, অজিত গুহ, আবুল কাসেম, সরদার ফজলুল করিম, শামসুদ্দিন আহমদ, শামসুল হক, মোহাম্মদ তোয়াহা, নঈমুদ্দিন আহমদ, তোফাজ্জল আলী, আলী আহমদ, মহিউদ্দিন, আনোয়ারা খাতুন, শামসুল আলম, শহীদল্লাহ কায়সার, তাজউদ্দীন আহমদ, লিলি খান, শওকত আলী, আবদুল আউয়াল, ওয়াহেদ চৌধুরী, নূরুল আলম, কাজী গোলাম মাহবুব প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কামরুদ্দীন আহমদ।

১৯৪৭ সালেই রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যশ্রেণির মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাব গড়ে উঠতে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলনের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মানি অর্ডার ফরম, ডাকটিকিট এবং মুদ্রায় শুধু ইংরেজি ও উর্দুর ব্যবহার হয়। বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করার ফলে পূর্ব বাংলার জনসাধারণ ও শিক্ষিত মহলে যথেষ্ট উদ্বেগ ও বিরুদ্ধ মনোভাবের সৃষ্টি হয়।

এই বিরুদ্ধ মনোভাবকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার প্রয়োজনেই ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তমদ্দুন মজলিস এবং মুসলিম ছাত্রলীগের অল্প কয়েকজন কর্মীর উপস্থিতিতে এই সংগ্রাম পরিষদটি গঠিত হয় এবং তমদ্দুন মজলিসের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হক আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। এই সংগ্রাম পরিষদ প্রথমদিকে পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান, লেখালেখি, আলোচনা সভা অনুষ্ঠান, সরকারি ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার এবং কিছু কিছু সভা-সমিতির মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। পরবর্তী পর্যায়ে ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে গঠিত এই প্রথম সংগ্রাম পরিষদটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এই অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু এবং ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি উত্থাপন করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবটির ওপর গণপরিষদে তুমুল বিতর্ক হয়। প্রস্তাবটির বিরোধিতা করতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান বলেন :

এখানে এ প্রশ্নটি তোলাই ভুল হয়েছে। এটি আমাদের জন্য এক জীবন-মরণ সমস্যা। আমি অন্তত তীব্রভাবে এই সংশোধনী প্রস্তাবের বিরোধিতা করি এবং আশা করি যে, এ ধরনের একটি সংশোধনী প্রস্তাবকে পরিষদ অগ্রাহ্য করবে।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হয়েছে। মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান তুলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে। ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে বাংলার সংগ্রামী ছাত্রসমাজ রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মার্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। আর ৬৯-এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সংগ্রামী ছাত্র-জনতা দেশব্যাপী তুমুল গণআন্দোলন সংঘটিত করে দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ভোটাধিকার অর্জন এবং সব রাজবন্দিসহ সব নেতাদের কারামুক্ত করে সত্যিকার অর্থেই ৫২-এর রক্তধারা ৬৯-এর রক্তস্রোতে মিশে ৭১-এর একসাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্ম হয়।

বেশি দূর নয় নিজ মহাদেশের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। দেখবেন সর্বস্তরে মাতৃভাষা ব্যবহারের সাফল্য। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন নামের রাষ্ট্রগুলো তাদের সর্বস্তরে মাতৃভাষাকে লালন, ধারণ ও প্রতিষ্ঠিত করে বৈশ্বিক উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে অগ্রসরমান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ কোরিয়া তার যাত্রা শুরু করে নিজের মাতৃভাষাকে অবলম্বন করে। ৩৮ হাজার বর্গমাইল আয়তনের দেশটি তার পাঁচ কোটি মানুষের জন্য বিশ্বের জ্ঞানভা-ারকে মাতৃভাষায় রূপান্তর করে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার প্রতিটি ক্ষেত্রে মাতৃভাষায় প্রচলন করতে সমর্থ হয়। এর ফলে জ্ঞানচর্চা ও উদ্ভাবনে এগিয়ে যেতে থাকে দেশটি, পরিণত হয় শিল্পোন্নত দেশে। ২০২০ সালে দেশটির মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৬৩৭ ডলার। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নে পরিণত হলো। গণিতের উৎকর্ষে দক্ষিণ কোরিয়া সপ্তম।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরিতে বিনিয়োগ না করে গবেষণা, উদ্ভাবন ও শিল্পের উন্নয়নে মনোনিবেশ করে। নিজেদের উৎকর্ষ সাধনে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও প্রযুক্তির উন্নয়নের পথে হাঁটে। জাপানিরা সবস্তরে মাতৃভাষা ব্যবহারে যত্নবান ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। এক লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৭ বর্গমাইল আয়তনের সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটি পৃথিবীর জ্ঞানভা-ার তাদের নিজ ভাষায় রূপান্তর করেছে। একটু খেয়াল করুন দেখবেন জাপানও গণিতের পারদর্শিতায় পৃথিবীতে ষষ্ঠ। জাপানের বর্তমান মাথাপিছু আয় ৪৪ হাজার ৫৮৫ ডলার।

বিশ্বের আনুমানিক সত হাজার ভাষার মধ্যে ২৫টি ভাষায় সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বাংলা ভাষা একটি।

সব দেশেই দেখা যায়, মানুষের জীবনের সঙ্গে তার ভাষার কিংবা নিজের ভাষার সঙ্গে তার জীবনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। জীবন যেখানে উন্নত, ভাষাও সেখানে উন্নত। নিজের কিংবা নিজেদের ভাষাকে উন্নত না করে কোনো ব্যক্তি কিংবা জাতি উন্নতি করতে পারে না। ভাষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান আর জ্ঞান বিজ্ঞান ও ভাষা অবিচ্ছেদ্য। সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা ইত্যাদি সৃষ্টির পেছনেও কাজ করে চিন্তা বা ভাষা। মানুষের সব কর্মকাণ্ডেরই মর্মে কাজ করে চিন্তা বা ভাষা। শ্রমশক্তি পরিচালিত হয় চিন্তাশক্তি দ্বারা। চিন্তা ও ভাষা অভিন্ন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র জাপান ও চীন তাদের ভাষার উন্নতির জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করে। বাংলাদেশকে উন্নতিশীল করতে হলে রাষ্ট্রভাষা বংলার প্রতি সরকারের রাজনৈতিক দলগুলোর ও সারা দেশের শিক্ষিত লোকদের মনোযোগী হওয়া উচিত। আমাদের উপলব্ধি করা দরকার যে, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও উন্নতির জন্য রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব ও উন্নতি অপরিহার্য। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা না টিকলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও বেশিদিন টিকবে না। দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় এমন মাত্র ২০০ ভাষা দুনিয়ায় আছে। এসব ভাষা বিকাশশীল। এগুলোর মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের দিক দিয়ে বাংলা ভাষার স্থান উপরের দিকেই আছে।

ভাষা যে দেশাত্মবোধে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো ভাষা আন্দোলন। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবোধ তৈরিতে ভাষা আন্দোলন ছিল একটি প্রেরণাদায়ী শক্তি। একুশে তাই আমাদের ঐতিহ্য-আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভাষাপ্রেমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশপ্রেম। সাধারণ সরল উক্তিতে বলা হয়, বায়ান্নতে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল বলেই সেই চৈতন্য বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহসী করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, প্রথিবীর অন্য কোনো দেশ যা পারেনি বাঙালি কেমন করে তা পারল? রক্ত দিল ভাষার জন্য! রক্তমূল্যে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার উদ্দীপনা সে পেল কোথা থেকে? অর্থাৎ অমন মর্যাদার বায়ান্ন তৈরি হলো কেমন করে? ইতিহাসে ফিরে তাকালে এর উত্তর পাওয়া কঠিন নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মায়ের ভাষার জন্য মৃত্যুঞ্জয়ী হতে পারে শুধু বাঙালিই। ভাষা যে দেশাত্মবোধে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো ভাষা আন্দোলন। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়বোধ তৈরিতে ভাষা আন্দোলন ছিল একটি প্রেরণাদায়ী শক্তি।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে অনেক বিজয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এর মধ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হওয়ার ঘটনা- এ জাতির সংগ্রামী এক বড় পাওয়া বলেই মনে করি।

বিশ্বের মানুষ এখন থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালি জাতির ভাষা, ভালোবাসা, গাথা শুনবে এবং নিজেরাও উদ্বুদ্ধ হবে। একই সঙ্গে বড় সব জাতি-গোষ্ঠী মাতৃভাষার মর্যাদার সঙ্গে সহাবস্থান করবে। বাংলাদেশের জনগণের এই উৎসবের দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ সব ভাষাশহীদকে এবং সব ভাষাসৈনিককে যাদের ত্যাগণ্ডতিতিক্ষার বিনিময়ে এই অর্জন বাংলাদেশে সম্পদে পরিণত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close