প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ইউক্রেনে গণকবর : যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দাবি ইইউর

* গণকবরে মৃতদেহে নির্যাতনের নতুন প্রমাণ * খারকিভে ১০টিরও বেশি রুশ নির্যাতন প্রকোষ্ঠ * নির্যাতনের জন্য রুশদের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সন্ধান * রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়

ইউক্রেনের ইজিয়াম শহরে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। এই গণকবরে পাওয়া গেছে ৪৪০টি মরদেহ। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ইজিয়াম শহরটি রাশিয়ার দখলে ছিল। সম্প্রতি ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে রুশ বাহিনীকে হঠিয়ে দিয়ে শহরটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। ইজিয়াম শহর এবং ওই এলাকা বর্তমানে ইউক্রেনীয়দের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পরই রুশ বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে চেকপ্রজাতন্ত্র। চেকপ্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যান লিপাভস্কি বলেছেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে, বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে এই ধরনের আক্রমণ অকল্পনীয় এবং ঘৃণ্য।’ শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, ‘আমাদের এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। আমরা সব যুদ্ধাপরাধীর শাস্তির পক্ষে আছি। আমি একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল দ্রুত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাই যা (ইউক্রেনে রুশ) আগ্রাসনের অপরাধের বিচার করবে।’

ইজিয়ামে গণকবরে থাকা অনেক মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্নও ছিল। এছাড়া গণকবরে থাকা নিহতদের অনেকে গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলায় প্রাণ হারান বলে জানান ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, সেখানে মৃতদেহ থেকে ‘নির্যাতনের নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে’। তিনি বলেন, ‘খারকিভ অঞ্চলে মুক্ত হওয়া বিভিন্ন শহরে এরই মধ্যে ১০টিরও বেশি নির্যাতন চেম্বার পাওয়া গেছে। নির্যাতনের জন্য রুশদের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খুঁজে পাওয়া গেছে। ‘রাশিয়ান ফ্যাসিস্ট’ এর জন্য ‘রাসিস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করে জেলেনস্কি বলেন, ‘নাৎসিরা সেটাই করেছে। রাসিস্টরা এটা করে এবং তাদের একইভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে এবং আদালতের কক্ষে জবাবদিহি করতে হবে।’

আলজাজিরা জানায়, ইজিয়ামের পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ স্তরের’ বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইজিয়াম এখন একটি জনশূন্য শহর, সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে কেবল একটি বিল্ডিং আছে যা অন্তত আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং আমি এখানে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর কথা বলছি- অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, স্কুল, ফার্মেসি, গির্জা- সবই জনশূন্য’। তার ভাষায়, ‘এটি এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি এই যুদ্ধের আসল অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন। এই শহরটি দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি বর্তমানে দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখানে সৈন্যদের রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলেও জীবনের কোনো চিহ্নই নেই।’

এর আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডার লেইন বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মুখোমুখি করতে চান।

জার্মান নিউজ আউটলেট বিল্ডের টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘পুতিনকে অবশ্যই এই যুদ্ধে হারতে হবে এবং তার কর্মের মুখোমুখি হতে হবে, এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর করেন। তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

ফন ডার লেইন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এ বিষয়ে সম্ভাব্য কার্যক্রমের লক্ষ্যে আমরা সাক্ষ্য সংগ্রহের কাজকে এগিয়ে নেওয়াকে সমর্থন করি। এটাই আমাদের আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থার ভিত্তি, যে আমরা এই অপরাধের শাস্তি দিই এবং শেষ পর্যন্ত পুতিন দায়ী।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close