প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এক হচ্ছে ইরান ও পাকিস্তান!

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের রেশ না কাটতেই পাকিস্তান সফরে গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করতেই ইসলামাবাদ সফর করছেন রাইসি। তবে তার এই সফরকে ‘ভিন্ন’ চোখেও দেখছেন কেউ কেউ।

তিন দিনের সফরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে রাইসির। জানা গেছে, গেল জানুয়ারিতে প্রতিবেশী দেশ দুটি একে অপরের ভূখণ্ডে হামলা চালানোর পর এখন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে বেশ আগ্রহী। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে কি পাকিস্তানকে কাছে টানছে ইরান? পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, রাইসি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গেও দেখা করবেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে যার বিশাল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলেই ধারণা করা হয়।

সফরের এজেন্ডা কী : মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, প্রতিবেশী দেশ দুটির (ইরান ও পাকিস্তান) মধ্যে অর্থনৈতিক, সীমান্ত ও জ্বালানি সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে গত সোমবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন রাইসি।

ইরানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান, প্রতিবেশী নীতির সঙ্গে সংগতি রেখে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী এবং এই সফরের (রাইসির) সময় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক, জ্বালানি এবং সীমান্ত সমস্যাসহ পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

আর ইরানি প্রেসিডেন্টের সফরের আগে, গত রবিবার জারি করা এক বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান-ইরান সম্পর্ক আরো জোরদার করতে এবং বাণিজ্য, কানেকটিভিটি, জ্বালানি, কৃষি এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য উভয় পক্ষের একটি বিস্তৃত এজেন্ডা থাকবে। জানা গেছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট লাহোর ও করাচিসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন বড় শহর পরিদর্শন করবেন এবং তার নজর থাকবে দ্বিপক্ষীয় ও বাণিজ্য সম্পর্কের দিকেই। কিন্তু রাইসির এই সফর কি শুধু বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ?

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা মোশাররফ জাইদির মতে, রাইসির সফর ইরানের জন্য পাকিস্তান তথা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের সমর্থন সুরক্ষিত করার একটি প্রচেষ্টাও। কারণ দেশটি সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ‘বিপজ্জনক সংঘাতে’ জড়িয়েছে।

ইরান-পাকিস্তান সম্পর্কের অবস্থা কী : ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্থির সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে। আর উভয় দেশই একে অপরকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। যার সবশেষ নজির দেখা গেছে গেল জানুয়ারিতে।

ওই সময় দুই দেশের মধ্যেই সীমান্ত উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। প্রথমে ইরান সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তখন জানায়, সশস্ত্র গোষ্ঠী জাইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এরপর ইরানের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং তেহরান থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে প্রতিশোধ নেয় পাকিস্তান। যদিও একপর্যায়ে দুই প্রতিবেশী সেই উত্তেজনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরে দুই দেশ একসঙ্গে ‘সন্ত্রাসবাদের হুমকি’ মোকাবিলা করতে সম্মত হয়, বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে। এ ছাড়া রাইসির সফরের আগে, তেহরান এবং ইসলামাবাদ ‘সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবিলার বিষয়েও আলোচনা করেছে।

পাকিস্তান-ইরান সম্পর্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ : সীমান্তে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক উন্নয়নের সরকারি সিদ্ধান্তে সমর্থন দিচ্ছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকরাও।

জানুয়ারির সীমান্ত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রবীণ পাকিস্তানি কূটনীতিক মালিহা লোধি বলেন, ভারত এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা রয়েছে পাকিস্তানের। তাই, ইরানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক, স্থিতিশীল সম্পর্ক রাখা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা-ই হচ্ছে।

ইসলামাবাদ এবং তেহরান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কাজ করছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং অপরিশোধিত তেলসহ দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যও রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close