প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
মুসলিমদের নিশানা বানিয়ে ভোটের প্রচারে মোদি
কংগ্রেস সভাপতির কড়া প্রতিবাদ
ধর্মীয় মেরূকরণ আর নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে না চলার অভিযোগের মাঝেই এবার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সরাসরি মুসলিমদের নিশানা বানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানায় নির্বাচনী এক জনসভায় অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, কংগ্রেস যদি তফসিলি জাতি ও জনজাতি, দলিত, ওবিসির সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিতে চায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কিছুতেই তা হতে দেবেন না।
গত কয়েক দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নানা বক্তব্যকে ঘিরে সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। মোদির বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরূকরণ, ঘৃণাসূচক বক্তব্যসহ একাধিক অভিযোগ তুলেছে তারা। অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনের আবহে আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গেরও।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এর মাঝেই আরো একবার প্রধানমন্ত্রীর গলায় একই সুর শোনা গেল। তবে অন্যবারের মতো আকারে-ইঙ্গিতে নয়, বরং সরাসরি মুসলিমদের নিশানা বানালেন তিনি। অবশ্য এর পর পরই তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি।
তেলেঙ্গানার জাহিরাবাদের প্রচারসভায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, যত দিন আমি বেঁচে আছি, দলিত জনজাতিদের সংরক্ষণকে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের হাতে তুলে দেব না, দেব না, দেব না! কংগ্রেস এবং তাদের যত সহযোগী রয়েছ, তারা কান খুলে এই কথাটা শুনে নাও।
এত বিতর্কের পরও কেন একই পথে হাঁটছেন ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে বলেছেন, কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথে রয়েছে এবং সেই কারণে ‘মঙ্গলসূত্র’ আর ‘মুসলমানদের’ প্রসঙ্গ বারবার নিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, মোদির দেওয়া সেই মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্যের জোর প্রতিবাদ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
মোদির উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আপনি বলেছেন... আমরা সম্পদ চুরি করে যাদের আরো সন্তান আছে তাদের দেব। দরিদ্র মানুষের সব সময় সন্তান বেশি হয়। সন্তান কী কেবল মুসলমানদেরই আছে? আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আমার নিজেরও তো পাঁচটি সন্তান। তাহলে কী শুধু মুসলমানদের বাচ্চা বেশি হয়? মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ছত্রিশগড়ের জাঞ্জগীর-চাম্পা জেলার একটি নির্বাচনী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মোদির দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘মোদি বলেছেন... আমরা জনগণের সম্পদ, মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেব। আমরা ৫৫ বছর ধরে দেশ শাসন করেছি, আমরা কার মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিয়েছি?’
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও অনেকে মনে করেন, বিজেপি সাম্প্রদায়িক ইস্যুকেই সামনে এনে ভোটে জিততে মরিয়া। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির গবেষক ও লেখক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নটাই যাতে না থাকে তার চেষ্টা করছে বিজেপি। ওরা চায় অন্য ইস্যু নয়, সাম্প্রদায়িকতার ইস্যুটা সামনে রেখে ভোট হোক।
দু’দফা ভোটের পর নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে বিজেপি, তেমনটাও মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বিশ্বনাথ চক্রবর্তী নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার বক্তব্য, ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
"