প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

নতুন যুদ্ধক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে সিরিয়ায়

গাজা নিয়ে সংঘাতের জের এবার সিরিয়ার ওপর খুব বেশি পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের ফলে সিরিয়া কি নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হবে? দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলার এক সপ্তাহ পরের ঘটনা। রমজানের শেষে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার স্ত্রী ও পরিবারকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। তিনি প্রার্থনায় অংশ নিয়েছিলেন এবং শহরের রাস্তায় হেঁটেছিলেন।

কয়েক দিন আগেই একটি বিদেশি রাষ্ট্র তার দেশে হামলা করে ইরানের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জেনারেলকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ, তারপরও তাকে দেখে মনে হয়নি তিনি বিচলিত বোধ করছেন। লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকা প্রোগ্রামের কনসাল্টিং ফেলো হেইড বলেছেন, এই বার্তাটা দেওয়াই আসাদের উদ্দেশ্য ছিল। তিনি বলেছেন, আসাদের এ ঘটনা হঠাৎ করে হয়নি। সবটাই ছিল আগে থেকে ঠিক করা। তিনি এটাই দেখাতে চেয়েছেন, সিরিয়ায় সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। সিরিয়া কোনো রকম প্রত্যাঘাতে যাবে না।

হেইডের মতে, এটা খুব অবাক হওয়ার মতো ঘটনাও নয়। গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই আসাদ তার থেকে একটা দূরত্ব তৈরি করেছেন। তিনি নিজেকে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ দেখানোর চেষ্টা করছেন। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। স্থানীয় সেনার পক্ষে পাল্টা আক্রমণে যাওয়া সম্ভব নয়। সিরিয়ার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই অবস্থায় গাজা নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলে পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে আসাদের লাভ হতে পারে। ২০১২ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইরান। তারা বিরোধী শক্তিকে হারানোর চেষ্টা শুরু করে। পরিবর্তে সিরিয়া তাদের লেবাননে যাওয়ার জন্য স্থল ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়।

লেবাননে হিজবুল্লাহ হলো ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সমর্থক। সিরিয়াতেও হিজবুল্লাহর উপস্থিতি আছে। ইরান ও হিজবুল্লাহ মনে করে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের শত্রু। সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতির ফলে ইসরায়েল চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাদের সীমান্তের কাছে ইরানের সেনা ও পরিকাঠামো নিয়ে ইসরায়েলের চিন্তা বাড়ে। তারা নিয়মিত সিরিয়ায় ইরানের পরিকাঠামোর ওপর আঘাত হানতে থাকে।

থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ব্যাখ্যা, ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপস্থিতি বন্ধ করা। ইরান যাতে সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। সিরিয়া হয়ে হিজবুল্লাহের সাপ্লাই লাইন বন্ধ করের জন্য ইসরায়েল একশবারেরও বেশি আঘাত করেছে। ২০১৭ সালের পর থেকে এই আক্রমণের সংখ্যা বাড়ে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরায়েল প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আঘাত হানার চেষ্টা করেছে।

সিরিয়া কেন প্রত্যাঘাত করে না : সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। তারা নিজেদের অস্তিত্বরক্ষার জন্যই ব্যস্ত। তাই তাদের পক্ষে ইসরায়েলকে প্রত্যাঘাত করা সম্ভব নয়। বিশ্লেষকদের মতে, তারা যদি সেই চেষ্টা করে, তাহলে খুব বেশি হলে রকেট ছুড়তে পারে, যা খালি জমিতে গিয়ে পড়বে। আর ইসরায়েল সিরিয়ার সম্পদের ওপর আক্রমণ চালায় না, তাদের লক্ষ্য থাকে ইরানের পরিকাঠামো ধ্বংস করা।

তবে ৭ অক্টোবর হামাস ইসারেয়েলে ঢুকে আক্রমণ করার পর সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা আরো নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতে হিজবুল্লাহ বা ইরানিদের মারার পথে খুব একটা যেত না ইসরায়েল। কিন্তু এখন তারা সেই কৌশল বদলেছে বলে মনে করেন হেইড।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close