শাদমান হাফিজ শুভ, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট)

  ০৫ মে, ২০২৪

চোররা অধরা

আক্কেলপুরে চিরকূট লিখে এক রাতেই ৮ মিটার চুরি

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে চিরকুটে ফোন নম্বর ও ক্রমিক নম্বর লিখে এক রাতেই পাশাপাশি দুইটি ফসলি মাঠে সেচের ৮টি বৈদ্যুতিক মিটার নিয়ে গেছে চোররা। শনিবার (৪ মে) রাতে উপজেলার তিলকপুর ও সোনামুখী ইউনিয়নের পাশাপাশি কাদোয়া ও গণিপুর জাফরপুর মাঠে এই ঘটনা ঘটে।

ওই দুটি মাঠে প্রায় ৭০ হেক্টর ইরি-বোরো ধানের আবাদ রয়েছে। মিটার চুরির কারণে বৈদ্যুতিক বিভ্রাটের উৎপাদন ব্যহত হওয়ার শঙ্কায় আছেন ওই মাঠের কৃষকরা। একই কায়দায় গত বছরের ডিসেম্বরে উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নে ৬টি মিটার চুরির ঘটনা ঘটে। ফোন নম্বর থাকা সত্বেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে চোরেরা।

রবিবার (৫ মে) ঘটনাস্থলে গিয়ে গভীর নলকুপ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাতে উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের কাদোয়া গ্রামের শহীদুল ইসলামের গভীর নলকূপের দুইটি, মাসুদ রানার একটি; সোনামুখী ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের মোজাম্মেল হকের একটি, এনামুল হকের একটি, আবু সালেকের একটি, আব্দুর রহমানের একটি ও রামশালা গ্রামের সিরাজ মৃধার একটিসহ মোট আটটি গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক মিটার নিয়ে যায় চোরেরা। এ সব মিটার তালাবদ্ধ লোহার খাঁচা ভেঙে নিয়ে যায় তারা।

এদিকে মিটার চুরির পর সেখানে কাগজের চিরকুটে একটি নম্বর লিখে রেখে যায় চোর চক্রের সদস্যরা। প্রতিটি মিটারে তারা আলাদা একটি ক্রমিক (সিরিয়াল) নম্বরও লিখে রাখে। পরে নলকূপ মালিকরা ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রতিটি মিটারের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্টে ৮ হাজার টাকা দাবি করে তারা। এমনি টাকা না দিলে আবারও মিটার চুরি করা হবে বলে হুমকি দেয় চোরেরা।

জানা গেছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়ন থেকে এক রাতে ছয়টি গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটে। সেখানেও চুরি যাওয়া প্রতটিি মিটারের ক্রমিক ও একটি মোবাইল ফোন নাম্বার দেওয়া ছিল। ফোন নম্বর থাকা সত্বেও পুলিশ চোর ধরতে না পারায় সেচ পাম্প মালিক ও কৃষকদের মধ্যে নানা প্রশ্নের তৈরি হয়েছে।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর জোনাল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিক সংযোগের মিটার নিতে প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে ওই অফিসে তিন ফেইজ মিটার মজুদ নেই। এছাড়া প্রতিটি বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির প্রতিটি ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এ সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চোর শনাক্ত ও চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি আক্কেলপুর জোনাল কার্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে কিছু গ্রাহক টাকা দিয়ে চোরদের কাছ থেকে মিটার ফেরত নিয়েছে বলে তারা জানেছে।


  • চিরকূটে মিটারের ক্রমিক ও মোবাইল ফোন নম্বর লেখা
  • মিটার প্রতি ৮ হাজার টাকা দাবি, নইলে ফের চুরির হুমকি
  • মাঠের ৭০ হেক্টর জমির ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
  • একাধিকবার চুরির পরও ধরা পড়েনি চোর চক্রের কেউ

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তিলকপুর ও সোনামুখী ইউনিয়নের আটটি গভীর নলকুপের সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদ হয়েছে। মিটার চুরির ঘটনায় এই সব জমিতে সেচ বন্ধ থাকায় ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষি দপ্তর।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর জোনাল কার্যলয়ের ডিজিএম মোহা. আব্দুর রহমান বলেন, ‘মিটার চুরির বিষয়ে গভীর নলকুপের মালিকরা জানিয়েছেন। থানায় মামলা করা হবে। এখন পর্যন্ত চুরি হওয়া কোনো মিটার উদ্ধার সম্ভব হয়নি। গভীর নলকূপের সংযোগ তিন ফেইজের হয়। মামলার পাশাপাশি চুরি রোধে গ্রাহকদের স্থায়ীভাবে ট্রান্সফরমার এবং মিটার পাহারা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গ্রাহক সচেতনতায় এলাকায় মাইকিংও করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই চুরি রোধ হচ্ছে না।’

তিলকপুর ইউনিয়নের কয়া গোপীনাথপুর গ্রামের গভীর নলকূপের মালিক মাসুদ রানা বলেন, ‘গভীর রাতে বৈদ্যুতিক মিটারের তালা বদ্ধ লোহার খাঁচা ভেঙে মিটার চুরি করে, সেখানে একটি চিরকুটে বিকাশ মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রেখে যায়। ওই নম্বরে কল করলে চোরেরা বলে ৮ হাজার টাকা দিতে হবে, না হলে আবারও মিটার চুরি করা হবে।’

কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এমনিতেই ধানের জমিতে পানি শুকিয়ে যায়। এ সময় ধানে দানা ধরতে শুরু করেছে। এখনই পর্যাপ্ত সেচ না দিলে ধান চিটা হয়ে নষ্ট হবে। আমরা উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে দিন পার করছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘এই সময় ধানের জন্য পানি অতি জরুরি। সাত দিনের মধ্যে জমিতে পানি সেচ না দিতে পারলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়া তীব্র তাপদাহের কারণে জমিতে তিন ইঞ্চি পরিমাণ পানি রাখতে পরামর্শ দিচ্ছি।’

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন বলেন, ‘মিটার চুরির বিষয়ে খবর পেয়েছি। চোরচক্র ধরতে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তাদের শনাক্ত করতে দ্রুত আমরা সক্ষম হবো।’

এখনো মিটার চোরদের ধরতে না পারার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। তাদের বিষয়ে বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জয়পুরহাট,আক্কেলপুর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close