প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

বিবিসির প্রতিবেদন

নিখোঁজরা ফেরার পর চুপ থাকেন কেন?

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিখোঁজ হচ্ছেন; যারা গুমের শিকার বলে প্রচার পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে চলতি বছর এ পর্যন্ত ৫৫ জন গুমের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে মাত্র নয়জন ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া দুজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে আর তিনজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার দেখিয়েছে। গুম বা নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা যখন পরিবারে ফিরে আসেন, তখন ওই ব্যক্তি কিংবা তার পরিবার কেউই মুখ খুলতে চায় না। তাদের সঙ্গে কী ঘটেছিল, কারা ধরেছিল বা কোথায় রাখা হয়েছিলÑসে সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাওয়া যায় না। পুলিশও এসব ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে কার্যত ব্যর্থ হচ্ছে বলেই অনেকে মনে করেন।

বিবিসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ফিরে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা এ প্রসঙ্গে কোনো কথাই বলতে রাজি হননি। এমনকি কোনো ধরনের তথ্য চাইলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও সাড়া পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে নিখোঁজদের প্রকাশ্যে কিংবা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা বিরল। সম্প্রতি নিখোঁজ থাকার পর ফিরে আসা প্রথম কোনো ব্যক্তি হিসেবে লেখক ফরহাদ মজহার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। অপহরণ এবং উদ্ধার হওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, উদ্ধার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। অবশ্য এমন একটি সময়ে ফরহাদ মজহার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন, যখন তার অপহরণের কাহিনি সাজানো বলে বর্ণনা করে পুলিশ মামলা করতে যাচ্ছে।

বিতর্ক এবং সন্দেহের জায়গা থেকে পর্যবেক্ষকদের অনেকেই ফরহাদ মজহারের ঘটনাকে অন্যান্য গুমের ঘটনা থেকে আলাদা করে দেখেন।

সুইডিশ বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল মনে করেন ফরহাদ মজহারের ঘটনা বাংলাদেশে বিদ্যমান গুম পরিস্থিতিকে হালকা করে দেয়। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির একজন পর্যবেক্ষক খলিল নিজেও ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সাময়িক সময়ের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। খলিল বলছেন, বাংলাদেশে গুমের বেশির ভাগ ঘটনার সঙ্গেই কোনো না কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা আছে।

বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে খলিল বলেন, ‘আজকে দেখেন মোবাশ্বার হাসানকে তুলে নিয়ে গেছে। আমরা লেখার পরে জানতাম, এটা বাংলাদেশের কোনো পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হবেই না। আমরা ইন্ডিয়ায় একটা ওয়েবসাইটে এটা পাবলিশ করেছি। বাংলাদেশে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটার অ্যাকসেস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ডেভিড বার্গম্যান এবং আমি তো বিদেশি সাংবাদিক। বাংলাদেশের অথরিটি বা সরকার আমাদেরকেই যেখানে কোনো স্পেস দিতে রাজি নয়, সেখানে ভিকটিমরা কি বের হয়ে এসে বাংলাদেশে বসে বলবে যে আমাদের ওমুক এজেন্সি নিয়ে গিয়েছিল? তার কোনো অবকাশ বাংলাদেশে নেই।’

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে তথ্য দিতে চান না। গণমাধ্যমে বা প্রকাশ্যে কথা না বললেও দু-একটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারকর্মীদের কাছে কেউ কেউ তথ্য দেন। ফিরে আসার পর মুখ না খোলার পেছনে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এবং ভয়ভীতি কাজ করে বলেই মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন।

বাংলাদেশে গত তিন মাসেই সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক ব্যক্তিত্বসহ ১৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত তিনজন ফেরত এসেছেন। কিন্তু তারা কোথায় ছিলেন, কে নিয়েছিল কিছুই তারা বলতে চান না। যারা ফিরে আসছেন তাদের ব্যাপারে কী জানা যাচ্ছেÑএ প্রশ্নে পুলিশের গণমাধ্যম ও প্রকাশনা বিভাগের এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয় যে, ওনারা আসার পর আর কথা বলতে চান না। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নিশ্চিত করি যে, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু ওনাদের কাছ থেকে আর কোনো তথ্য না পাওয়ায় আমাদের পরবর্তী অনুসন্ধান ব্যাহত হয়। এর সঙ্গে কে জড়িত, সন্দেহভাজন কিছু আছে কি নাÑএ জিনিসগুলো খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে যায়।’ মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সরকারি বাহিনীর সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ থাকায় বাংলাদেশে নিখোঁজ বা গুম পরিস্থিতি মারাত্মক আতঙ্ক এবং উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist