নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশাল বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ
চার নাইজেরীয়সহ আটক সাত
প্রতারণার অভিনব ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ দেশে অবস্থানরত নাইজেরীয় প্রতারক চক্র। তারা প্রথমে কোনো বাংলাদেশিকে টার্গেট করে ফোন বা ই-মেইলে সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে এ দেশে বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা। আর সেই প্রস্তাবে রাজি হলে সেই ‘বিশাল’ টাকা তুলতে হলে প্রাথমিকভাবে ‘অল্প কিছু’ বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানায় তারা। সেই টাকা তাদের দিতেই প্রতারণার ফাঁদে ফেঁসে যান টার্গেট করা ব্যক্তিটি। নাইজেরিয়ান প্রতারকদের সঙ্গে এ কাজে হাত মিলিয়েছে কিছু বাংলাদেশিও। এভাবে দিনের পর দিন মানুষকে ঠকানোর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। নাইজেরিয়ার এমনই একটি প্রতারকচক্র ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
গত বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার নাইজেরীয়সহ সাত প্রতারককে আটক করে ডিবি উত্তর বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। আটক ব্যক্তিরা হলেন- জন আগডি ইউজিও, আফেজ, মাইকেল ইউজিনি ব্রাউন, নামডি কেলভিন, লিজা আক্তার, মহসিন শেখ ও তাসমিয়া পারভীন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, ‘মেইল বা মেসেজে বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করে নাইজেরীয় প্রতারকরা। এরপর বলে ‘আমার কাছে প্রচুর টাকা আছে। তোমাদের দেশে টাকা বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে এবং এই বিনিয়োগ নিরাপদ। তাই আমি টাকা পাঠাব। তুমি সেটাকে কাজে লাগাবে। তোমার শ্রম আর আমার টাকা।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরবর্তীতে সেই টাকা তুলতে গেলে বলা হয়, এর জন্য কিছু টাকা দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে টাকা দিলে প্রতারণার শিকার হতে হয়। আর এই ফাঁদে অনেক বাংলাদেশিকে ফাঁসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা।’
আবদুল বাতেন বলেন, ‘সম্প্রতি কামরুজ্জামান নামের একজনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় প্রিসকা খালিফা নামের এক বিদেশি নারীর। সেই নারী জানায়, তার বাবা ড. ডেভিড উইলসন খালিফার নামে লন্ডনের একটি ব্যাংক একাউন্টে ৩.৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার জমা আছে। এগুলো তোলার জন্য বিশ্বস্ত লোক ও কিছু টাকা প্রয়োজন। প্রিসকা খালিফার ফাঁদে পা দিয়ে কামরুজ্জামান আটক লিজা ও মহসিনের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কয়েক ধাপে ২৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৪ টাকা জমা দেন। যা এই প্রতারক চক্র আত্মসাৎ করে।’
মহানগর পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ‘প্রতারক প্রত্যেকের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কারো কারো ১০-১২টি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এদের মধ্যে লিজার একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত এক মাসে কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আর এসব টাকা দেশের বাইরে পাচার করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। কখনো দামি পণ্য কিনে সেটা বিদেশে নিয়ে বিক্রি করে টাকা নিচ্ছে, কখনোবা হুন্ডি করে টাকা দেশের বাইরে পাচার করছে। এদের সঙ্গে বেশ কিছু অসাধু মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর যোগসাজশ রয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।’
নাইজেরীয় প্রতারক চক্র বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে আসার পর গার্মেন্টস বা অন্য ব্যবসার আড়ালে এসব প্রতারণা করে। এরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, ‘এদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে বা লুকিয়ে ফেলে। ফলে আটক করার পর তাদের পরিচয় নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া কোনো মামলার সাজা হলেও ছাড়া পাওয়ার পর তাদের নতুন ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না। একইভাবে তারা নতুনভাবে প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়ে। আর এদের সহায়তা করছে দেশীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি।’ তবে অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে অচিরেই বড় অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।
"