ইকবাল কবির লেমন, সোনাতলা (বগুড়া)

  ০৩ মে, ২০২৪

পারুল ফুল

বগুড়ার সোনাতলা

পারুল একটি ফুলের নাম। লতা মুঙ্গেশকরের কণ্ঠ পুরোনো দিনের ‘সাত ভাই চম্পা’ গানে ভাইদের জন্য পারুল বোনের আকুলি-বিকুলি- কোথায় যে হারিয়ে গেল সে-ই ফুল। পারুল ফুলের কথা শুনতেই নস্টালজিক হয়ে স্মৃতির ভেলায় চড়ে মন। সেই পারুল ফুলের গাছের সন্ধান পাওয়া গেল বগুড়ায়। সেখানে নীরবে নিভৃতে পারুল ফুলের একটি গাছ মাথা উঁচিয়ে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

বগুড়ার সোনাতলায় সরকারি নাজির আখতার কলেজে গাছটি জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্বের। পারুল গাছে ফুটেছে অসংখ্য ছোট ছোট সাদা ফুল। ফুলের সৌন্দর্যে এখন মোহিত সোনাতলার সরকারি নাজির আখতার কলেজ প্রাঙ্গণ। নতুন ফুল ফুটে ঝরে পড়ে নাজির আখতার কলেজের এই বৃক্ষ চত্বরকে দিয়েছে আলাদা অবয়ব। ফুলের গন্ধে ভ্রমর ও মৌমাছির আনাগোনা বেড়েছে। ফুল দেখতে কলেজ প্রাঙ্গণে বেড়েছে সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের আনাগোনা।

সোনাতলার সমাজসেবী প্রবীণ শামসুজ্জামান মনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের এক অধ্যাপকসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এসে গাছটি দেখে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানিয়েছেন এটি পারুল ফুলেরই গাছ। কলেজের অধ্যক্ষও একই কথা জানিয়ে বলেন, উদ্ভিদ গবেষণা জরিপে পারুল ফুলের গাছের যে বর্ণনা আছে তা বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একমত হয়েছেন সোনাতলা কলেজের ভেতরের এই গাছটি পারুল গাছেরই ঘনিষ্ঠ প্রজাতি এবং এটা পারুল ফুলেরই গাছ। শিক্ষকরা বিরল প্রজাতির এই ফুল গাছের ডাল, বাকল, ফুল সবই পরীক্ষা করেছেন। এই গাছ থেকে হাল্কা মিষ্টি গন্ধের ফিকে তামার মতো রঙের ফুল ফোটে মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত। বলা যায়, পারুল গ্রীষ্মকালীন ফুল।

‘Bignoniceae’ পরিবারভুক্ত (বর্তমান বৈজ্ঞানিক নাম Stereospermum cheloniodes, পূর্বের বৈজ্ঞানিক নাম Stereospermum suaveolens) ইংরেজিতে ‘Trumpet’ নামের গাছটি ও এর ফুল নিয়ে আলোচনা, লেখালেখি ও গবেষণাও হয়েছে বিস্তর। সে লেখালেখিতে অংশ নিয়েছেন দেশবরেণ্য নিঃসর্গপ্রেমী দ্বিজেন শর্মা, নওয়াজেশ আহমেদ, বিপ্রদাশ বড়ুয়া, আমিরুল আলম খান, মোকারম হোসেন, জামিল আখতার বীনু ও সমুদ্র হকের মতো বিদগ্ধ ব্যক্তিরা। পারুলের বৈজ্ঞানিক শনাক্তিতে গবেষণায় অংশ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল হাসান, ড. জসিম উদ্দীন, ড. অলিউর রহমান, ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সরদার নাসির উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. অপূর্ব কুমার রায়। তাদের অধিকাংশের জোরালো অভিমত এটিই বিরল প্রজাতির পারুল।

কলেজের জমিদাতা মরহুম সৈয়দ নুরুল হোদা ভারতের মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর থেকে পারুলের চারাটি এনে তার তৎকালীন বসতভিটায় লাগিয়েছিলেন। এখন সেই গাছটির উচ্চতা ৫০ ফুট, বেড় ১২ ফুট (গোড়ার দিকের প্রশস্ততা)। বিরল প্রজাতির পারুল গাছটি এখনো অদ্বিতীয় অবস্থানে থেকে অসাধারণ ফুলের মোহমায়ায় ও ভালোবাসায় প্রতিনিয়ত জড়াচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close