যশোর প্রতিনিধি

  ০৩ মে, ২০২৪

যশোর-নড়াইল

সড়কে পিচ গলছে কেন, তদন্তে দুদক

* পিচ ৪৮-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গলার কথা * নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণের অভিযোগ * চার মাস আগে এ মহাসড়কে পাথর কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয় * প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা

তাপপ্রবাহে যশোর-নড়াইল সড়কের পিচ (বিটুমিন) গলার কারণ নির্ণয় করতে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর-নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা দেখেন দুদক কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে এ সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। চলতি মৌসুমে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই সপ্তাহ আগ থেকেই প্রচণ্ড এ তাপপ্রবাহের কারণে গলতে শুরু করে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কের পিচ। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরিবহন শ্রমিক, নেতাসহ সচেতন মহলের দাবি, দুর্নীতি করতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় পিচ গলে যাচ্ছে। এতে করে যানবাহন চলাচলে সমস্যায় পড়ছেন চালকরা। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা দেখেন দুদক কর্মকর্তারা। এ সময় তারা সড়কের কাজ নিম্নমানের বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানানো হয়।

সড়ক পরিদর্শনকালে দুদক যশোরের সহকারী পরিচালক চিরঞ্জন নিয়োগী, সহকারী পরিদর্শক সাফিউল্লাহসহ সড়ক বিভাগের দুই সহকারী প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর-নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষা করেছি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত লিপিবদ্ধ করে আমরা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাব। তদন্তের স্বার্থে আমরা এর বেশি বলতে পারছি না।’ সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, চার মাস আগে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কে পাথর কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন যশোর-নড়াইল সড়কের যশোর অংশের ঝুমঝুমপুর এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে পিচ গলে যানবাহনের চাকায় আটকে যাচ্ছে। এ সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এ সড়ক সংস্কারের সময়। এ সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের নির্মাণকাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুদক ও সড়ক জনপদের কর্মকর্তাদের সামনে। করিম শেখ নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, ‘রোদ গরমে দুপুর থেকে রাস্তার পিচ গলতে শুরু করে। দুপুর গড়ানোর পর রাস্তার পিচ যেন কাদায় পরিণত হয়। ফলে ছোট যানবাহনের চাকা রাস্তায় আটকে যায়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।’ সোহরাব হোসেন নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘যশোর নড়াইল মহাসড়কে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। সড়কে হেঁটে চললে জুতা পিচের সঙ্গে আটকে যাচ্ছে। এর দায় হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের।’ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারা সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করেন তা ৬০-৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে এ পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।

সওজ সংশ্লিষ্ট সূত্র পিচ গলার কারণ হিসেবে বলেছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে অনুভূত তাপমাত্র আরো কয়েক ডিগ্রি বেশি হয়। সড়কের পিচের ওপর এ তাপমাত্রা আরো প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে। আর রং কালো হওয়ায় এ পিচ সূর্যের তাপও শোষণ করে বেশি। এছাড়া সড়কে চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পিচ গলে যেতে পারে। তবে এর বাইরে সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘যশোর-নড়াইল সড়কের যেসব স্থানে বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে; গরমে সেখানে বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এজন্য গলে যাওয়া স্থানগুলোয় বালি ও নুড়িপাথর দেওয়া হচ্ছে; যাতে গলে যাওয়া পিচ পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। সড়কে নিম্নমানের কোনো সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, দুদক তদন্ত করছে। অনিয়ম হলে তাদের তদন্তে জানা যাবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close